শিবলী নোমান
৬.
বুদ্ধিজীবীর মুক্তমনা হওয়া ছাড়া আদতে কোন পথ নাই। নিজের অবস্থানকে সে কখনো ধ্রুব ও একমাত্র সঠিক ধরতে পারে না। নিজের অবস্থান ও বিশ্বাস বজায় রাখলেও অন্যের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তার বোঝাপড়া তার নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করার জন্যই জরুরি। সেই হিসাবে ভালো শ্রোতা হতে না পারলে বুদ্ধিজীবী হিসেবে বেড়ে ওঠা কঠিন।
৭.
কোন বিষয়ে নিজ অবস্থান পরিবর্তন একজন বুদ্ধিজীবীর জন্যে খুব স্বাভাবিক ও নিত্যদিনের ঘটনা। কারণ একটি বিষয়কে একজন বুদ্ধিজীবীই পারে বিভিন্ন দিক ও মাত্রা থেকে বিবেচনা করতে। বুদ্ধিজীবীর চিন্তা যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া, তাই তার দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানের পরিবর্তনও একটি চলমান প্রক্রিয়া।
৮.
একজন বুদ্ধিজীবী, যিনি নিছক একটি জাতির বুদ্ধিজীবী হিসেবে থাকেন তাকে ঊন-বুদ্ধিজীবী বলাই শ্রেয়। বুদ্ধিজীবী দায়বদ্ধ থাকেন মানবজাতি ও মানব সভ্যতার কাছে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জাতির কাছে নয়। মানুষ সম্পর্কিত বা মনুষ্য জড়িত যে কোন অন্যায়-অবিচার-অপরাধের বিরুদ্ধে নিদেনপক্ষে নৈতিক অবস্থান—তা হতে পারে একান্তই নিজস্ব, প্রচারবিমুখ—নেয়া তার বিশেষত্বের মৌলিক দিক। এই অবস্থানই দিনশেষে তার কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়। তাই, বুদ্ধিজীবীমাত্রই চরিত্রগতভাবে আন্তর্জাতিকতাবাদী।
৯.
বুদ্ধিজীবী কখনো বিচ্ছিন্নভাবে কোন ঘটনার পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। যদি সে একটি অঞ্চলে একটি ঘটনার প্রতিবাদ করে, তাহলে একই ধরণের ভিন্ন ঘটনা যা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন পাত্রের অংশগ্রহণে সম্পাদিত হয় কিন্তু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অভিন্ন, তাহলে সবগুলো ঘটনার জন্য সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অবস্থান গ্রহণ করাই তাকে বেনিয়া/দালাল তথা জৈব বুদ্ধিজীবীদের থেকে আলাদা করে।
১০.
কোন মতবাদ বা মতাদর্শের প্রয়োগ—তার ব্যাপ্তি যাই হোক না কেন—কখন আগ্রাসী হয়ে ওঠে তা বুঝতে পারার ক্ষমতা বুদ্ধিজীবীর থাকতে হয়। এই ক্ষমতা ব্যবহার করেই সে বর্তমান মতবাদ বা মতাদর্শকে অপ্রয়োজনীয় বা তামাদি ঘোষণা করে নতুন পথের সন্ধানে সবাইকে আহ্বান করতে পারে।