শিবলী নোমান

দেশীয় টিভি চ্যানেলের কোয়াসি-ক্রিটিক্যাল তত্ত্ব

শিবলী নোমান

গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে একটি ব্যর্থ খাত বলা খুব বেশি আপত্তির মুখে পড়বে বলে আমি শক্তভাবে বিশ্বাস করি না। বরং একটি ভঙ্গুর কাঠামো নিয়ে এই খাতটি যে প্রায় ২৩ বছর পার করে এসেছে, অনেক ক্ষেত্রে এটিই এখন আমার কাছে বিস্ময় জাগানিয়া। এক্ষেত্রে যারা এই খাতকে ব্যর্থ বলায় মনঃক্ষুণ্ন হবেন বা হয়েছেন তাদের প্রতি বিনীতভাবে বলে রাখছি যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কর্মী, সংবাদকর্মী, পর্দার সামনের বা পেছনের মানুষদের প্রদেয় শ্রম বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই এবং এর ফলেই ঐ বিষয়ে আমি আলোচনাটিকে নিয়ে যেতে চাই না। বরং এই আলোচনাটি অনেক বেশি যেই বিষয়কে সামনে রেখে তা হলো, আমাদের এই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আসলে শিল্প হিসেবে দাঁড়াতে না পারার কারণ অনুসন্ধান। ২০১৭ সালে প্রকাশিত গণমাধ্যম বিষয়ক পত্রিকা ‘মাধ্যম’-এর (রাসেল রাব্বী সম্পাদিত) প্রথম সংখ্যায় আমার একই খাত নিয়ে দেশীয় টিভি চ্যানেলের স্বরূপ সন্ধানে শীর্ষক লেখায় আমি বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর স্বরূপ নিয়ে আলোচনার সময় দেশের এই খাতে রাজনৈতিক দলীয়করণ, চ্যানেলগুলোর প্রকরণ না থেকে মিশ্র চ্যানেলে পরিণত হওয়া (সংবাদভিত্তিক চ্যানেলসমূহ ব্যতিরেকে), তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠানের উপর অতিনির্ভরতা, সংবাদ নিয়ে রাজনীতির তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট, বিজ্ঞাপন, চ্যানেলগুলোর মান-নির্ধারক বা নরম্যাটিভ চরিত্র প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকের লেখাটিকে সেই লেখার পরবর্তী অধ্যায় মনে করে পাঠ করলে কিছুটা সুবিধা হবে বলে বোধ করি।

এই লেখার শিরোনাম থেকে এটুকু বুঝতে পারার কথা যে বর্তমান লেখাটি মূলত তাত্ত্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করবে, আগের লেখার মতো ব্যবহারিক দিকে মূল আলোকপাত থাকবে না। তবে একথাও সত্য যে ব্যবহারিক বিষয়াদি নিয়েই তত্ত্ব গড়ে ওঠে আর তাই তাত্ত্বিক আলোচনা করতে হলেও ব্যবহারিক চর্চা নিয়ে আলোচনা আমাদের করতেই হবে। এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিয়ে ক্রিটিক্যাল আলোচনা, অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যের মতো এই লেখাটিকেও শেষ বিচারে Explanatory, Normative ও Practical করার চেষ্টা থাকবে; যদিও শেষ পর্যন্ত তা নিজের ক্রিটিক্যাল অবস্থান বজায় রাখতে পারবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ায় একে ‘কোয়াসি-ক্রিটিক্যাল’ লেখাই সঙ্গত বোধ করছি। এই আলোচনায় মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে; প্রথমত, টিআরপি বা টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট এবং দ্বিতীয়ত, সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানা ও কর্মীদের প্রতি নানা ধরনের বৈষম্য।

প্রসঙ্গ টিআরপি ও বর্দিয়্যু

বিভিন্ন সময় টিআরপি বা টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট শব্দগুচ্ছ আমরা শুনতে পেলেও এই বিষয়টি আসলে কী তা নিয়ে এক ধরনের ধোয়াশা সবসময়ই আছে। তবে যেভাবে শব্দগুচ্ছটি আমরা শুনতে পাই তার কনটেক্সট বিবেচনায় এটুকুও বুঝতে পারি যে, বিষয়টি টেলিভিশন প্রোগ্রাম বা চ্যানেলের জনপ্রিয়তার সাথে জড়িত। টিআরপি মূলত একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠান কতজন মানুষ দেখছে তার ভিত্তিতে চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয়তা জরিপ তৈরি করে, এটি হয়তো টিআরপির সবচেয়ে সরল সংজ্ঞায়ন।

Marie Kinsey ব্রিটেনের টিআরপি ব্যবস্থা নিয়ে রচিত ২০০৬-০৭ সালের এক লেখায় উল্লেখ করেছেন ব্রিটেনে টেলিভিশনের প্রতি মিনিটের দর্শক ডাটা সংগ্রহ করার কাজটি করে থাকে Broadcasters’ Audience Research Bureau বা BARB, যা ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর যৌথ মালিকানায় আছে BBC, Channel 4, ITV, Five, BSkyB এর মতো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং The Institute of Practitioners in Advertising। এক্ষেত্রে এই তথ্যটি জানা জরুরি যে ব্রিটেনে টিআরপি নির্ণয়ে যুক্ত প্রতিষ্ঠানটির সাথে একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে। BARB টেলিভিশনের দর্শকের পরিমাণবাক (Quantitative) ও গুণবাচক (Qualitative) তথ্য সংগ্রহ করে। ২০০৬-০৭ সালে তারা ৫২,০০০ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এবং ৫,১০০ বাসার ১১,৫০০ জন দর্শকের তথ্য নিয়ে কাজ করে। People Meter-এ রেজিস্ট্রেশনের পর দর্শক কোন চ্যানেল কতক্ষণ, কতজন দেখছেন তা পরিমাপ করা হয় Black Box-এর মাধ্যমে। একই সাথে এই পদ্ধতিতে দর্শকদের বয়স, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান, পরিবারে সদস্য সংখ্যার মতো ডেমোগ্রাফিক তথ্যও সংগ্রহ করা হয়, যার ফলে যথাযথ টিআরপি পরিমাপ করা সহজ হয়। ব্রিটেনে রেডিও ও ইন্টারনেটের অডিয়েন্স পরিমাপের জন্যও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, জানাচ্ছে ম্যারি কিনসে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও টিআরপি গণনার কাজটিকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়।

এ পর্যায়ে এসে বিবেচ্য হলো টিআরপি নিয়ে এত আলোচনা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আয়ের উৎস নিয়ে বোঝাপড়া থাকা জরুরি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আয়ের উৎস মূলত দুটি। প্রথমত, দর্শকদের সাবস্ক্রিপশন এবং দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত অর্থ। সাবস্ক্রিপশন মূলত একজন দর্শক যে ধরনের অনুষ্ঠান বা আধেয় দেখতে চায় তার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। একজন দর্শক সংবাদ পছন্দ করলে তিনি সংবাদভিত্তিক একটি চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করবেন এটাই স্বাভাবিক। এভাবে সাবস্ক্রাইব করা চ্যানেলগুলো আয় করে থাকে মাসিক বা বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি-এর মাধ্যমে।

অন্যদিকে চ্যানেলগুলোর আরেকটি আয়ের খাত বিজ্ঞাপন; যা বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে পাওয়া যায়। ব্যবসায়িক দৃষ্টি থেকে চিন্তা করলে আমাদের সেই চ্যানেলটিকেই আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অর্থ দেয়া স্বাভাবিক যেই চ্যানেলে সবচেয়ে বেশি দর্শক রয়েছে। কারণ এর ফলে আমাদের পণ্যটির বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি থাকে, যদিও এক্ষেত্রে আরো কিছু ফ্যাক্টর বিবেচনায় থেকে যায়। একই ভাবে, যেই চ্যানেলের পেছনে সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয়তা রয়েছে, সেই চ্যানেলটিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অন্যান্য চ্যানেলের তুলনায় বেশি অর্থ খরচ করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন প্রদান আর বিজ্ঞাপনের মূল্য উভয়ের পেছনে কিন্তু নির্ধারক একটাই, আর তা হলো দর্শকের সংখ্যা বা দর্শকপ্রিয়তা। আর এই দর্শকপ্রিয়তা যাচাইয়ের উপায় হলো টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট তথা টিআরপি। টিআরপি নিয়ে এত আলোচনা এজন্যই।

দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের দেশে চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করার ব্যবস্থাটি এখনো জনপ্রিয় হয় নি বা তা করা হয় নি। স্বল্প পরিসরে কিছু প্রতিষ্ঠান Direct to Home বা DTH পদ্ধতিতে Set Top Box স্থাপনের মাধ্যমে এ ধরনের চেষ্টা করলেও তার ফলাফল ব্যাপক আকারে এখনো পৌঁছায় নি। ফলে দেশের আপামর টেলিভিশন দর্শক পুরনো ক্যাবল টিভির আওতায় রয়ে গিয়েছে, আর এর ফলে দর্শকদের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ উপার্জন করার পথটি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সামনে এখনো বিস্তৃত পরিসরে উন্মুক্ত হয় নি।

অন্যদিকে বাংলাদেশের টিআরপি নির্ণয় ব্যবস্থা নিয়ে ধোয়াশা আছে খোদ টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরতদের ভেতরই। কী পদ্ধতিতে, কতজন নমুনার মাধ্যমে প্রতি মাসে চ্যানেলগুলোর রেটিং প্রস্তুত করা হচ্ছে তা নিয়ে বিশ্বাসহীনতা ও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে টেলিভিশন মহলের অভ্যন্তরেই। সিরিয়াস নামক একটি প্রতিষ্ঠান প্রথমে বাংলাদেশে টিআরপি নির্ণয়ের কাজ করলেও বর্তমানে মিডিয়া রিসার্চ বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে বলে জানা যায়। “ত্রুটিপূর্ণ Frequency Monitoring পদ্ধতিতে” তারা এই রেটিং নির্ণয় করে থাকে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টিআরপি পরিমাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে গণমাধ্যম বা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর কোন সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। সম্পর্ক শুধু এটুকুই যে চ্যানেলগুলো মাস শেষে তাদের রেটিং জানতে পারে আর বিজ্ঞপনদাতারা জানতে পারে কার রেটিং কত ভালো। কিন্তু এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অস্বচ্ছতা থেকেই যায়।

আর ঠিক এই অবস্থান থেকেই এই আলোচনায় পিয়েরে বর্দিয়্যুকে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। ১৯৯৮ সালে টেলিভিশন বিষয়ক এক রচনায় বর্দিয়্যু লিখেছিলেন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে কোন বিষয়কে খুব সাধারণ করে ফেলে। এমনকি তারা জটিল কোন বিষয়ে আলোচনায় যেতেও মূলত নারাজ। রাজনৈতিক বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে টেলিভিশনে কোন ধরনের ডিসকোর্স বা বিশ্লেষণ কিংবা কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ টেলিভিশনে পাওয়া যায় না বলে মনে করেন বর্দিয়্যু। বরং টেলিভিশনগুলো ব্যস্ত থাকে দর্শকের জন্য Interesting আধেয় প্রচারে কিংবা Day to day events বিষয়ক প্রচারে, এছাড়া আর কোন দিকে তাদের খেয়াল থাকে না। বর্দিয়্যু বলেন,

There is no discourse (scientific analysis, political manifesto, whatever) and no action (demonstration, strike) that doesn’t have to face this trial of journalistic selection in order to catch the public eye. The effect is censorship, which journalists practice without even being aware of it. They retain only the things capable of interesting them and “keeping their attention,” which means things that fit their categories and mental grid; and they reject as insignificant or remain indifferent to symbolic expressions that ought to reach the population as a whole.

টেলিভিশনগুলোর এমন মানসিকতার পেছনে বর্দিয়্যু টিআরপি ব্যবস্থার হাত খুঁজে পেয়েছেন। তিনি মনে করেন, রেটিং ব্যবস্থার কারণেই চ্যানেলগুলো একটি কাঠামোর বাইরে চিন্তা করতে পারে না, তারা দ্বিধায় ভুগে প্রচলিতের বাইরে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে। আবার এই রেটিং বাড়ানোর জন্য চ্যানেলগুলো স্কুপ বা এক্সক্লুসিভ নিউজের পেছনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, আর এক্ষেত্রে ভুলে যায় সেসব ব্যক্তির স্বার্থরক্ষার কথা যাদের নিয়ে সংবাদটি গঠিত বা সংবাদটি যাদের কথা বলে। আর তাই বর্দিয়্যু টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে আহ্বান জানান টিআরপি ব্যবস্থাকে সম্মিলিভাবে অস্বীকার করে বা অগ্রাহ্য করে, অস্থির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে আরো বেশি বিশ্লেষণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে, যদিও বর্দিয়্যু নিজেই এই ব্যাপারটিকে বেশ ইউটোপীয় মনে করেন।

এক্ষেত্রে আমি মনে করি বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো, বিশেষ করে সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলোর সামনে এই অবস্থান নেয়ার একটি অসাধারণ সুযোগ ছিল এবং রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে বিদ্যমান টিআরপি ব্যবস্থা নিয়ে অবিশ্বস্ততার দোলাচল রয়েছে তাই চ্যানেলগুলো এই ব্যবস্থাকে বাতিল করে সম্মিলিতভাবে বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারতো। এছাড়া বর্দিয়্যু তিন ধরনের Capital-এর কথা বলেছেন যা মানুষ অর্জন করতে চায়। এগুলো হলো Social capital, Cultural capital এবং Symbolic capital। সামাজিক সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে প্রথম; শিক্ষা, জ্ঞান ও চিন্তার মাধ্যমে দ্বিতীয় এবং সম্মান অর্জনের মাধ্যমে তৃতীয় ধরনের Capital অর্জন করা যায়। চিন্তা করে দেখা যেতে পারে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো থেকে দর্শকরা আদৌ কী পাচ্ছে। আমি মনে করি বর্তমানে পরিস্থিতিতে চ্যানেল, অর্থাৎ সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলো থেকে দর্শকের Cultural capital অর্জনের সম্ভাবনা সর্বাধিক যদি চ্যানেলগুলো তাদের নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া সংবাদ প্রচার, কোথায় কে কী বলেছে আর কোথায় কী ঘটেছে তার ধারাবিবরণীমূলক সংবাদ সম্প্রচার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এসবের বিপরীতে সমালোচনামূলক, বিশ্লেষণাত্মক ও ক্রিটিক্যাল আধেয় প্রচারের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর গুণগত মানোন্নয়নের সাথে সাথে দর্শকের আত্মোন্নয়ন সম্ভব; আর এজন্য প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা, আর এখান থেকেই আলোচনা যেতে পারে পরের বিষয়ে।

মালিকানা, বৈষম্য ও মার্ক্সবাদী প্রেক্ষাপট

উপরের আলোচনা আমরা শেষ করেছিলাম এমন একটি অবস্থানে থেকে যেখানে বলা হচ্ছিলো টিআরপি ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বিশ্লেষণাত্মক ও ক্রিটিক্যাল ধারায় আধেয় প্রচার করতে। আপাতভাবে চিন্তাটি সহজ-সরল মনে হলেও খোদ টেলিভিশন কর্মীদের জন্য বিষয়টি সহজ হবে না তাদের মালিকানার চরিত্রের কারণে। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি-র যাত্রা শুরুর দীর্ঘকাল পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম সম্প্রচারে আসে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল। এরপর ক্রমেই একের পর এক চ্যানেল আসতে থাকে, এর ফলে বাংলাদেশের সম্প্রচার মাধ্যমের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে বলা হয়ে থাকে তাত্ত্বিক মহলে। তবে এসব চ্যানেলের সিংহভাগ লাইসেন্স ও মালিকানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসম্পন্ন তো বটেই, এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে ব্যবসায়িক মন-মানসিকতা। সামান্য খেয়াল করলেই চোখে পড়বে এবং খুব বাজেভাবে চোখে পড়বে যে এসব চ্যানেলের মালিকানায় আছে একেকটি বৃহৎ কিংবা উদীয়মান মুনাফামুখী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। এদের কারো উদ্দেশ্যই সাধারণ জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছে দিয়ে তাদের ক্ষমতায়িত করা নয় বরং তথ্যকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করে তা মালিকগোষ্ঠীর দখলে রেখে ব্যবসায়িক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং প্রতিযোগিতার পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা। Denis McQuail একে বলেছেন অর্থনৈতিক মালিকানার মাধ্যমে গণমাধ্যমের বার্তা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া হিসেবে। এক্ষেত্রে মার্ক্সীয় ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর মডেল ব্যবহার করলে গণমাধ্যমের মালিকানাকে ভিত্তি ও এর বার্তাকে উপরিকাঠামো ধরে নেয়া যেতে পারে। একে আমরা Stuart Hall-এর Cultural Studies-এর সাথেও যুক্ত করতে পারি যেখানে গণমাধ্যম আসলে ‘কী’ বলে নয় বরং ‘কার কথা’ বলে সেদিকে নজর দেয়ার কথা বলা হয়। বিষয়টা অনেকটা এ ধরনের হয়,

 

তবে ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর এই ব্যাখ্যাকে যান্ত্রিক ধরে নিলে বিপদে পড়তে হবে কারণ খোদ মার্ক্সবাদ বলছে এই সম্পর্ক যান্ত্রিক নয় বরং দ্বান্দ্বিক। এ প্রসঙ্গে আর্নস্ট ফিশার বলেন,

বিকাশের নিয়মের সমস্যাটির মতোই ‘ভিত্তি’ এবং ‘উপরিকাঠামো’-র মাঝের পারস্পরিক সম্পর্ক যান্ত্রিকভাবে ভুল বোঝা হয়েছে…বৌদ্ধিক উৎপাদন বস্তুগত উৎপাদনের পরে হয় না। তা ঘটে যুগপৎভাবে এবং তার সাথে নিরন্তর মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে।

যা মূলত এ ধরণের হয়ে থাকে,

আবার ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর ধারণার যান্ত্রিক বিশ্লেষণে যেহেতু গণমাধ্যমের মালিকানা প্রথমে উদ্ভূত হতে হয়, আর তারপরই গণমাধ্যম তার বার্তা তৈরি করে, কিন্তু আদতে দ্বান্দ্বিক ব্যাখ্যায় দেখা যায় এই দুটি বিষয়ে একে অপরকে প্রভাবিত করতে থাকে এবং মূল বিচারে একসাথে চলতে থাকে। তাই এক্ষেত্রে মার্ক্সীয় ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর সম্পর্ক নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয় তা গণমাধ্যমের মালিকানা আর তার বার্তা বা আধেয়র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে, ফলে বিভ্রান্তির সুযোগ থাকে। Raymond Williams এক্ষেত্রে জটিলতা কমানোর লক্ষে George Lukacs-এর Totality-র ধারণা ব্যবহার করেন, যেখানে সমাজকে নানাবিধ সামাজিক উপাদানের সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি Entity হিসেবে দেখা হয়। এভাবে দেখলে আমরা গণমাধ্যমের মালিকানা ও গণমাধ্যমের বার্তাকে একই গণমাধ্যম ব্যবস্থার পরস্পর নির্ভরশীল দুইটি উপাদান হিসেবে সহজে চিহ্নিত করতে পারি।

যেহেতু নানাবিধ উপাদানের ভেতর গণমাধ্যমের মালিকানা থেকেই পুঁজির প্রাথমিক প্রবাহ আসে তাই গণমাধ্যম ব্যবস্থায় মালিকানা একটি বিশেষ ক্ষমতাধর অবস্থানে বিরাজ করে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের দেশে সম্প্রচার মাধ্যমের কর্মীদের জন্য কোন নীতিমালা না থাকার জটিলতা। ফলে মালিকপক্ষ নিজ স্বার্থে গণমাধ্যমের বার্তা ব্যবহারে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকে যেখানে একজন কর্মীর প্রতিবাদ কিংবা নিতান্তই ভিন্নমত প্রকাশের ফলাফল গড়াতে পারে ছাটাই পর্যন্ত। আর মালিকপক্ষ ভিন্নমত গ্রহণ করলেও গণমাধ্যমে তারা নিজেদের মুনাফামুখী চরিত্রের এক্সপোজার গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে কি? তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সমালোচনামূলক, বিশ্লেষণাত্মক, ক্রিটিক্যাল ভূমিকায় এই চ্যানেলগুলোকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কি? বা কিভাবে?

ঠিক এ পর্যায়েই আলোচনায় নিয়ে আসা যায় গণমাধ্যম তথা আমাদের আলোচ্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কর্মী তথা সংবাদকর্মীদের। ধ্রুপদী অর্থনীতিতে শ্রম বিভাজনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন অ্যাডাম স্মিথ কারণ তাঁর মতে এর ফলে উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব, আর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার তাত্ত্বিক আলোচনাতেও শ্রম বিভাজনকে দেখা হয় বিশেষ গুরুত্বসহকারে। আমাদের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও (মূলত কোন গণমাধ্যমই) এর বাইরে নয়। বরং বলা যায় কর্মীদের শ্রম বিভাজনের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের গণমাধ্যমগুলো, সাথে সাথে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও। আমাদের গণমাধ্যম তথা সংবাদভিত্তিক গণমাধ্যমে খুবই নির্দিষ্ট ধরনের শ্রম বিভাজন আমরা দেখতে পাই। প্রতিটি কর্মীর জন্য নির্দিষ্ট কাজ থাকে, তিনি মিডিয়া হাউজের কর্মী হলেও হাউজের ভেতর তার প্রধান পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় তিনি কোন বিভাগে কাজ করেন তা। দিনের পর দিন তাকে এই একই বিভাগে কাজ করে যেতে হয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা অনুযায়ী। এর সাথে যুক্ত হয় রোস্টার পদ্ধতিতে কাজ করার বাধ্যবাধকতা। কোন একজন কর্মী আগ্রহ থাকলেও তার কাজের বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগে যুক্ত হয়ে নতুন কাজ শিখতে পারেন না, আর রোস্টার পরিবর্তনের জন্যও থাকেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। শেষবিচারে পুরো ব্যবস্থাটি খুবই কর্তৃত্বপরায়ণ এবং নিয়ন্ত্রণবাদী।

একই সাথে যুক্ত হয়ে যায় বেতন বৈষম্য। একই বিভাগে একই কাজ করা সমান যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীদের বেতনে বৈষম্য খুব সাধারণ বিষয়, এক্ষেত্রে যোগ্যতা বা কর্মদক্ষতার চেয়ে বিবেচ্য বিষয় হিসেবে সামনে আসে মালিকপক্ষের ব্যয়-সংকচন নীতি, যাকে যত কম বেতনে কাজ করানো যায়। অর্থাৎ কর্মীদের আবশ্যিক শ্রমঘণ্টার কোন নির্দিষ্টতা এই সেক্টরে নেই। ফলে খুব সহজেই কর্মীদের আবশ্যিক শ্রমঘণ্টা কমিয়ে এনে উদ্বৃত্ত শ্রম তৈরি করা যায়, যা থেকে আসে বহুলকাঙ্ক্ষিত মুনাফা। আবার সংবাদমাধ্যমের চাকরি গৎবাঁধা ৯টা-৫টা চাকরির মতো নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একজন কর্মীকে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে হয় প্রায়শই, কিন্তু বিনা মজুরিতে; অর্থাৎ শ্রমঘণ্টা বৃদ্ধি করে উদ্বৃত্ত মুনাফা বৃদ্ধি করে নেয়ার এক আদর্শ অবস্থাও বিরাজ করে এই হাউজগুলোতে। তাই বলা যেতে পারে মার্ক্সীয় অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত মুনাফা বৃদ্ধির জন্য উদ্বৃত্ত শ্রম বৃদ্ধি বা উদ্বৃত্ত মূল্য বৃদ্ধির যেসব সাধারণ প্রক্রিয়া রয়েছে, তার সবগুলোই আমাদের দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিদ্যমান। সব মিলে মিডিয়া হাউজগুলো এক ধরনের কারাগারে পরিণত হয় যেখানে কর্মীরা দিনের পর দিন নিজের মানসিক ও শারীরিক শ্রম বিক্রি করে। এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে ফ্রেডরিক শিলারের বক্তব্য,

শ্রম হতে আনন্দের, উপায় হতে লক্ষ্যের, উদ্যোগ হতে ফলাফলের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। সমগ্রের একটা ছোট অংশের শেকলে অন্তহীন বন্দিত্বে বাঁধা পড়ে মানুষ নিছক একটা টুকরো হয়ে বেড়ে উঠেছে।

এছাড়া মিডিয়া হাউজগুলোতে কিন্তু নিয়মিত বেতনের নিশ্চয়তাও নেই, মাসের অর্ধেক প্রায়ই চলে যায় আগের মাসের বেতন পেতে পেতে, যদি ভাগ্য ভালো থাকে আর কী, নাহলে পূর্ববর্তী মাসের বেতন কর্মীরা কিস্তিতেও পেতে পারেন কদাচিৎ। এসবের পেছনে কারণ বলা হয় হাউজের পুঁজির সংকট, মুনাফা নেই। কিন্তু হাউজের মালিক যে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজেরও মালিক, তারই ব্যানারে নানা দুর্যোগে দেখা যাবে বড় বড় তহবিলে অর্থ সহায়তা দিয়ে নাম কামাচ্ছে ঐ একই মালিক গোষ্ঠী। কিন্তু তারই মালিকানার মিডিয়া হাউজের কর্মীদের নিয়মিত বেতন দেয়ার সময় পুঁজির সংকট দেখা দেয়। তবে তা হবে নাই বা কেন, মিডিয়া তো মালিকদের সবসময় কাজে লাগে না, শুধু মালিক বা মালিকপক্ষ বিপদে পড়লে কাজে লাগে। তাই যখন কাজে লাগে তখনকার বেতনটুকু দিলেই তো হয়ে যাবার কথা, নাকি! তারপরও যে বেতন হয় তাই তো অনেক বেশি! তবে হাতেগোনা কিছু হাউজে নিয়মিত সময়মতো বেতন হয় এখনো। তারা আমাদের সবেধন নীলমণি!

মার্কসীয় অর্থনীতিতে যেভাবে বলা হয়ে থাকে যে, মুনাফার হার কম এমন খাত থেকে পুঁজিপতিরা অধিক মুনাফার হারসম্পন্ন খাতে তাদের পুঁজি সরিয়ে নেন, সেই বিষয়টিকে এক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে হয় না কারণ আমাদের দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকপক্ষ নিজেদের স্বার্থেই তাদের বিনিয়োগকৃত গণমাধ্যমটিকে বন্ধ করে দিতে চান না, তা যতই অলাভজনক হোক, যদি তা হয়েও থাকে। কিন্তু যেহেতু এই খাতটি কোন মালিকপক্ষেরই একমাত্র ব্যবসায়িক খাত নয় এবং খাতটি যেহেতু শুধুমাত্র মালিকপক্ষের ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষার নিমিত্তে গঠিত, তাই এই খাতের কর্মীরা দিনশেষে মালিকপক্ষের জন্য খুব বেশি জরুরিও নয়, ঠিক যেমন তার কাছে জরুরি নয় গণমাধ্যম খাতের উন্নয়ন!

এক্ষেত্রে এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই যে গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদের এই দুরবস্থা কিংবা মালিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে সচেতন নয়। তাদের অধিকাংশ এ বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন এবং সর্বদা এই বিষয়টি তাদের বিবেচনায় থাকে। Lumpenproletariat-দের সাথে এখানে তাদের একদম স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। লুম্পেন প্রলেতারিয়েতরা যেখানে তাদের নিজস্ব দুর্দশা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং পরিবর্তন তথা বিপ্লবে আগ্রহী নয়, সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সিংহভাগের কর্মক্ষেত্রে শোষণ-বঞ্চনা নিয়ে সচেতনতা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তারপরও নানা পিছুটানে তারা পরিবর্তনের পক্ষে একত্র হতে পারে না, যদিও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে ও তার পক্ষে কথা বলে। কর্মীদের এই সচেতন কিন্তু নিরুপায় অংশটিকে আমরা হয়তো Lumpen Activist বলতে পারি যারা নিজেদের দুরবস্থা সম্পর্কে সচেতন, নিজেদের ফোরামে সোচ্চার কিন্তু শেষ বিচারে কোন পদক্ষেপ নিতে অপারগ বা নিরুপায়।

তবে আমি এই পক্ষটিকে অনুরোধ করি তাদের লুম্পেন বলায় ক্ষিপ্ত না হতে, কারণ আমার লুম্পেন অ্যাক্টিভিস্টদের তালিকায় সবার আগে আমার নামটি রয়েছে নিঃসন্দেহে, দুইটি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলের সাবেক কর্মী হিসেবে আমি নিজেকে ঐ অবস্থানেই দেখি।

এই লেখাটি দিনশেষে একটি নিরাশাবাদী লেখার দিকে এগিয়ে গেল তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে আশাবাদী রচনার সুযোগ এই মূহুর্তে অন্তত আমি দেখতে পাই না। তবে আমাদের গণমাধ্যম তথা টেলিভশন চ্যানেলগুলোতে বিদ্যমান অগণিত লুম্পেন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর আমি আস্থা রাখতে চাই। একদিন হয়তো তাদের চিন্তা ও তৎপরতার মাধ্যমেই গণমাধ্যমের সমালোচনামূলক, বিশ্লেষণাত্মক ও ক্রিটিক্যাল রূপ পরিগ্রহ করার শুভক্ষণটি বেরিয়ে আসবে। তবে সেই পথটি সহজ হবে না তাও নিশ্চিত।

তথ্য ও সহায়ক সূত্র:

ফিশার, আর্নস্ট। (২০১৮)। মার্কস আসলে যা বলেছেন (ভাষান্তর জাভেদ হুসেন)। সংহতি।

ভট্টাচার্য, পিনাকী। (২০১৯)। এনলাইটেনমেন্ট থেকে পোস্ট মডার্নিজম: চিন্তার অভিযাত্রা। বাতিঘর।

মুহাম্মদ, আনু। (২০১৯)। মার্কসের পুঁজি ও মূল্যতত্ত্ব প্রসঙ্গে। সূত্র আনু মুহাম্মদ, অনুন্নত দেশে সমাজতন্ত্র: সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতা (পৃ. ১৭-৩৪)। সংহতি।

রহমান, শাহীন। (২০১০)। সমাজতন্ত্রের সহজ পাঠ। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী।

Bourdies, P. (2006). On television. In M. G. Durham & D. M. Kellner (Eds.), Media and cultural studies: Keyworks (pp. 328-336). Blackwell Publishing.

Critical theory. (2014, May 23). Retrieved from https://colouringinculture.wordpress.com/2014/05/23/critical-theory/

Fuchs, C. (2014). Social media: A critical Introduction. Sage.

Griffin, EM., Ledbetter, A., & Sparks, G. (2019). A first look at communication theory (10th ed.). McGraw Hill.

Jamuna TV. (2019, August 12). টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) | Investigation 360 Degree | EP 113 [Video file]. Retrieved from https://www.youtube.com/watch?v=5cZA1Y6ZTgA

Kinsey, M. (2009). Eyes, ears and clicks: The battle for an Audience. In J. Chapman & M. Kinsey (Eds.), Broadcast journalism: A critical Introduction (pp. 27-38). Routledge.

McQuail, D. (2010). McQuail’s mass communication theory (6th ed.). Sage.

Williams, R. (2006). Base and superstructure in Marxist cultural theory. In M. G. Durham & D. M. Kellner (Eds.), Media and cultural studies: Keyworks (pp. 130-143). Blackwell Publishing.

১ thought on “দেশীয় টিভি চ্যানেলের কোয়াসি-ক্রিটিক্যাল তত্ত্ব”

  1. Pingback: দেশীয় টিভি চ্যানেলের স্বরূপ সন্ধানে

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।