শিবলী নোমান
১.
বুদ্ধিজীবী কখনো কোন পক্ষের একান্ত হতে পারে না। যখন যে পক্ষ নেয়া নৈতিক দায়িত্বের ভেতর পড়ে, সেই পক্ষ গ্রহণ করাই বুদ্ধিজীবীর কাজ। এই কাজ করার জন্যই বুদ্ধিজীবীর উচিত হবে না কোন পক্ষ থেকে এমন কোন সুবিধা নেয়া, যা তার স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
২.
তাবত বিষয়ে অবস্থান নেয়া এবং জনসমক্ষে তা প্রকাশ করার দায় কখনোই একজন বুদ্ধিজীবীর থাকতে পারে না। যাকে সব বিষয়ে কথা বলতে হয় সে বুদ্ধিজীবী নয় বরং যান্ত্রিক সত্তা, যেখান থেকে অধিকাংশ সময় অপ্রয়োজনীয়, অন্তঃসারশূন্য ও অগভীর আলোচ্য পয়দা হয়। বস্তুত পক্ষে অন্য যে কোন মানুষের মতো একজন বুদ্ধিজীবীও সকল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানসম্পন্ন ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ হতে পারেন না। বরঞ্চ কতিপয় ক্ষেত্রের উপর বৌদ্ধিক দখল—যা সাধারণত হিংসা উদ্রেককারী—ও দারুণ বিপ্লবী চিন্তাসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারলেই একজন বুদ্ধিজীবী তার দায় মেটাতে সক্ষম হতে পারেন।
৩.
সমাজ ও সাধারণ মানুষের প্রকৃত মুক্তি আনয়নই একজন বুদ্ধিজীবীর লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে তার মৌলবাদী হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে এই মৌলবাদ নিশ্চিতভাবেই দ্বান্দ্বিক। বুদ্ধিজীবী একদিকে মানব মুক্তির পথের সাথে আপোস করতে পারেন না, অন্যদিকে মানব মুক্তির নিমিত্তেই তাকে প্রতিনিয়ত আপোস-মীমাংসায় অংশ নিতে হয়।
৪.
যে ব্যক্তির লক্ষ্য জনপ্রিয়তা, তাকে বুদ্ধিজীবী না বলাই শ্রেয়। একজন বুদ্ধিজীবী নিঃসন্দেহেই সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকাদের একজন। আর এ কারণেই তার অনেক অবস্থান ও বক্তব্য সমাজ মেনে নিবে না। তাকে ক্ষেত্রবিশেষে নিন্দার পাত্রে পরিণত করা হয়। জনপ্রিয় বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠতে পারা কঠিন, হয়ে উঠতে পারলে সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন। জনপ্রিয়তা ধরে রাখার বাসনা একজন বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিজীবী পরিচয় হারানোর সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।
৫.
বুদ্ধিজীবীর কথা, লেখা ও বক্তব্য হতে হবে সহজবোধ্য। সাধারণ মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করতে পারাই তার সফলতা। অহেতুক কাঠিন্য তাকে কেবল দূরে সরিয়ে অতিমানবে পরিণত করবে, যা তাকে লক্ষ্যপূরণের সম্ভাব্যতা থেকে কেবল দূরেই সরিয়ে দিবে।