শিবলী নোমান

আই হ্যাভ আ ড্রিম

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

ভাষান্তর: শিবলী নোমান

(১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর নাগরিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত The March on Washington for Jobs and Freedom কর্মসূচিতে ওয়াশিংটন ডিসি-র লিংকন ম্যামোরিয়ালের সামনে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তাঁর I Have a Dream শীর্ষক বিখ্যাত বক্তৃতাটি প্রদান করেন। দারুণ উপমা, রূপক ও রেটরিকে পূর্ণ এই বক্তৃতাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো প্রাসঙ্গিক। বক্তৃতাটির ভিডিও পাওয়া যাবে এখানে, লিখিত আকারে পাওয়া যাবে এই লিংকে।)

আজ আপনাদের সাথে এখানে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। মুক্তির লক্ষ্যে এক মহানতম কর্মসূচি হিসেবে আমাদের জাতির ইতিহাসে আজকের এই জমায়েত লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।

এখানে আমরা যে মহান মার্কিনীর প্রতীকী ছায়াতলে দাঁড়িয়ে আছি, আজ হতে এক শতাব্দী আগে তিনি মুক্তির ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। লাখ লাখ নিগ্রো দাস যখন মারাত্মক অন্যায়ের অনলে পীড়িত ছিল, তখন এই গুরুত্বপূর্ণ ফরমানটি সেই সব নিগ্রো দাসদের জন্য আশাবাদের এক মহান বাতিঘর হিসেবে সামনে এসেছিল। বন্দিত্বের দীর্ঘ রজনী শেষে এটি এসেছিল এক আনন্দপূর্ণ প্রভাতরূপে।

কিন্তু এক শতাব্দীকাল পরে এসেও নিগ্রোরা আজ মুক্ত নয়। বিভাজনের হাতকড়া ও বৈষম্যের শৃঙ্খলে নিগ্রোদের জীবন এখনো দুঃখজনকভাবে পঙ্গু হয়ে আছে। ১০০ বছর পরে এসে বস্তুগত উন্নয়নের সুবিশাল এক সমুদ্রের মাঝেও নিগ্রোরা বাস করছে দারিদ্র্যপূর্ণ একাকী দ্বীপে। মার্কিন সমাজের এক প্রান্তে পড়ে থাকা নিগ্রোরা আজও অবহেলিত এবং নিজের ভূমিতে নিজেকে খুঁজে পায় নির্বাসিতরূপে। আর তাই এখানে আমরা এক লজ্জাজনক পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে হাজির হয়েছি।

এক দিক থেকে বলা যায়, একটি ব্যাংক চেক ভাঙাতে আমরা আমাদের রাজধানীতে হাজির হয়েছি। আমাদের প্রজাতন্ত্রের স্থপতিগণ যখন আমাদের সংবিধান ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মহান শব্দগুলো লিখেছিলেন, তখন আসলে তারা একটি প্রমিজরি নোটে স্বাক্ষর করছিলেন। আর প্রত্যেক মার্কিনীই ছিল এই প্রমিজরি নোটের উত্তরাধিকারী।

এই নোটের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জীবন, মুক্তি ও সুখ লাভের অবিচ্ছিন্ন অধিকারসমূহের নিশ্চয়তার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল। এই প্রতিজ্ঞা ছিল প্রতিটি মানুষের জন্য। হ্যা, সাদা মানুষের সাথে সাথে কালো মানুষদের জন্যও।

কিন্তু আজ এটি নিশ্চিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কালো নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই প্রমিজরি নোটের প্রতিজ্ঞা পূরণে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এই পবিত্র দায়িত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের স্থলে নিগ্রোদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি খারাপ চেক প্রদান করেছে। এমন এক চেক যা ফেরত এসেছে, আর তাতে লিখে দেয়া হয়েছে “অপর্যাপ্ত তহবিল”।

কিন্তু আমরা বিশ্বাস করতে রাজি নই যে ন্যায্যতার ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতে রাজি নই যে এই রাষ্ট্রের সুযোগসমূহের মহান সিন্দুকগুলোতে রয়েছে অপর্যাপ্ত তহবিল। আর এজন্যই আমরা এখানে এসেছি সেই চেকটি ভাঙাতে, এটি সেই চেক যা আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমাদেরকে সরবরাহ করবে মুক্তির ঐশ্বর্য ও ন্যায্যতার নিরাপত্তা।

এই পবিত্র স্থানে আমাদের উপস্থিত হওয়ার আরেকটি কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রকে বর্তমান সময়ের আশু প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। এটি শান্ত হয়ে যাওয়ার বিলাসিতায় মগ্ন হওয়ার বা ধীরে ধীরে এগুনোর প্রশান্তিময় ঔষধ গ্রহণের সময় নয়। এটি গণতন্ত্রের প্রতিজ্ঞাসমূহকে বাস্তবে পরিণত করার সময়। এটি অন্ধকার ও বিভাজনের নিরানন্দ উপত্যকা থেকে বেরিয়ে এসে বর্ণগত ন্যায্যতার রৌদ্রজ্জ্বল পথের দিকে যাওয়ার সময়। এটি আমাদের জাতিকে বর্ণগত অন্যায্যতার চোরাবালি থেকে তুলে এনে ভ্রাতৃত্বের কঠিন পাথরে স্থাপনের সময়। এটি হলো ঈশ্বরের সকল সন্তানের জন্য ন্যায্যতাকে বাস্তবতায় পরিণত করার সময়।

বর্তমান মুহূর্তের আশু প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করা হলে তা আমাদের জাতির জন্য প্রাণঘাতী হবে। মুক্তি ও সমতার এক স্বাস্থ্যকর বসন্তকাল না আসা পর্যন্ত নিগ্রোদের এই ন্যায়সঙ্গত অসন্তোষের ঘর্মাক্ত গ্রীষ্মকালের অবসান ঘটবে না। ১৯৬৩ সাল কোন সমাপ্তি নয়, বরং এক সূচনাবিন্দু। নিগ্রোদের এখন উচিত তাদের আবেগকে এক পাশে সরিয়ে রাখা ও সন্তুষ্ট হওয়া, এমনটা যারা মনে করেন, তাদের এই ঘোর প্রবল ঝাঁকুনিতে কেটে যাবে যদি এখন রাষ্ট্র বরাবরের মতো তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত নিগ্রোরা তাদের নাগরিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন বিশ্রাম বা প্রশান্তির কথা ভাবা যাবে না। ন্যায্যতার উজ্জ্বল দিবসের উত্থানের আগ পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তিসমূহকে কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য বিদ্রোহের ঘূর্ণিঝড়কে জারি রাখতে হবে।

কিন্তু সেই মানুষদেরকে আমার অবশ্যই কিছু কথা বলতে হবে, যারা ন্যায্যতার প্রাসাদের দিকে এগিয়ে যাওয়া পথের তপ্ত দ্বারে অবস্থান করছেন। আমাদের ন্যায্য অবস্থান নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায় আমরা যেন কোনভাবেই কোন অন্যায় কর্মে লিপ্ত না হই। তিক্ততা ও জিঘাংসার পাত্র থেকে পান করার মাধ্যমে আমরা যেন আমাদের মুক্তির তৃষ্ণা মেটানোর পথ না খুঁজি। মর্যাদা ও অনুশাসনের সুউচ্চ অবস্থানে থেকেই আমাদেরকে সর্বদা আমাদের সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। আমাদের সৃজনশীল প্রতিবাদকে কোনভাবেই শারীরিক সংঘর্ষের মাধ্যমে অধঃপতিত হওয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না। তাই বারবার বলতে হয়, শারীরিক শক্তির সাথে আত্মার শক্তির মিলনের মাধ্যমে এক মহিমান্বিত উচ্চতায় আমাদের উঠতেই হবে।

যে মহিমান্বিত ও নতুন জঙ্গি মনোভাব নিগ্রো সম্প্রদায়কে পূর্ণতা দিয়েছে, তাকে যেন কোনভাবেই আমরা সকল শ্বেতাঙ্গ মানুষের অবিশ্বাস তৈরির দিকে নিয়ে না যাই। কারণ আমাদের অনেক শ্বেতাঙ্গ ভাই বুঝে গিয়েছেন যে তাদের ভাগ্য আসলে বাঁধা রয়েছে আমাদের ভাগ্যের সাথে। আর আজ এখানে তাদের অনেকের উপস্থিতিই এর প্রমাণ। এবং তাদেরকে এটিও বুঝতে হবে যে আমাদের মুক্তির সাথেই তাদের মুক্তি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। আমরা কেউই একা একা হাটতে পারবো না।

আর যখন আমরা হাটছি, আমদেরকে অঙ্গীকার করতে হবে যে আমরা সামনের দিকে হেটে যাবো। আমরা হেটে পেছনে যেতে পারবো না। নাগরিক অধিকারপন্থিদের উদ্দেশ্য করে অনেকেই বলেন, “আপনারা কখন সন্তুষ্ট হবেন?”

যতদিন পর্যন্ত নিগ্রোরা পুলিশি বর্বরতার অবর্ণনীয় আতঙ্কের শিকার হয়ে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের পক্ষে সন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব হবে না।

যতদিন পর্যন্ত ভ্রমণের ক্লান্তিতে অবসন্ন আমাদের শরীর মহাসড়কগুলোর পাশের মোটেল ও শহরগুলোর হোটেলসমূহে বিশ্রামের সুযোগ পাবে না, ততদিন পর্যন্ত আমাদের পক্ষে সন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব হবে না।

আমরা ততদিন পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারি না, যতদিন পর্যন্ত একটি ছোট বস্তি থেকে তুলনামূলক বড় মহল্লায় স্থানান্তরই হয়ে থাকবে নিগ্রোদের মৌলিক গতিশীলতা।

“শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য”— এ জাতীয় লেখা বা প্রতীকের মাধ্যমে যতদিন পর্যন্ত আমাদের সন্তানদের স্বরূপকে ছিনতাই করা হবে, আর লুট হতে থাকবে তাদের মর্যাদা, ততদিন পর্যন্ত আমাদের পক্ষে সন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব হবে না।

যতদিন পর্যন্ত মিসিসিপির একজন নিগ্রো ভোট দিতে পারবে না, আর নিউ ইয়র্কের একজন নিগ্রো যতদিন বিশ্বাস করবে যে তার কাছে এমন কিছুই নেই যার জন্য ভোট দেয়া প্রয়োজন, ততদিন পর্যন্ত আমাদের পক্ষে সন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব হবে না।

না, আমরা সন্তুষ্ট নই। আর যতদিন পর্যন্ত ন্যায্যতা পানির মতো নিচের দিকে প্রবাহিত না হবে, এবং ন্যায়পরায়ণতা প্রবাহিত হবে না এক শক্তিধর জলপ্রবাহের ন্যায়, ততদিন পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট হবো না।

আমি মোটেও ভুলে যাই নি যে, আপনাদের ভেতর অনেকেই বহু কষ্ট ও দুর্দশা ভোগ করে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদের ভেতর অনেকেই কারাগারের বদ্ধ কক্ষ থেকে সদ্য বেরিয়ে এসেছেন। আপনাদের ভেতর অনেকেই এমন সব অঞ্চল থেকে এসেছেন, যেখানে মুক্তির সন্ধানের বিনিময়ে আপনাদের কপালে জুটেছে নিপীড়নের ঝঞ্ছাগ্রস্ত ক্ষত ও পুলিশি নৃশংসতার মুহুর্মূহ ঝাপ্টা। এসবের ফলে আপনারা একেকজন সৃজনশীল দুর্ভোগে অভিজ্ঞ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। যে দুর্ভোগের জন্য আপনি দায়ী নন, তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, এই বিশ্বাস রেখে আপনারা নিজেদের কাজ চালিয়ে যান।

যে উপায়েই হোক না কেন, বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব ও সেই পরিবর্তন আসবে, এটি জেনে নিয়ে আপনারা ফিরে যান মিসিসিপিতে, ফিরে যান আলবামা-দক্ষিণ ক্যারোলিনা-জর্জিয়া-ল্যুইজিয়ানায়। এটি জেনে নিয়ে আপনারা ফিরে যান উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতে অবস্থিত আমাদের বস্তি ও মহল্লাগুলোতে। আমরা যেন কোনভাবেই হতাশার উপত্যকায় পথ না হারাই।

বন্ধুরা, আজ ও আগামী দিনগুলোতে আমাদের ভাগ্যে থাকা দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখেই আজ আমি আপনাদের বলতে চাই, আমি এখনো স্বপ্ন দেখি। আমার এই স্বপ্নের শিকড় আমেরিকান স্বপ্নের অনেক গভীরে প্রোথিত।

আমি স্বপ্ন দেখি এই জাতি একদিন জেগে উঠবে এবং তাদের দর্শনের সঠিক অর্থকে বাস্তবায়ন করবে, যেখানে “আমরা এই সত্যকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধারণ করি যে সকল মানুষকে একই মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে”।

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়গুলোতে সাবেক দাসদের সন্তান ও সাবেক দাসমালিকদের সন্তানরা ভ্রাতৃত্বের টেবিলে পাশাপাশি বসতে সক্ষম হবে।

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন মিসিসিপির মতো রাজ্যও মুক্তি ও ন্যায়ের এক মরুদ্যানে পরিণত হবে, যদিও এই মুহূর্তে রাজ্যটি অন্যায় ও নিপীড়নের তাপে ঘর্মাক্ত অবস্থায় রয়েছে।

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন আমার চারটি ছোট ছোট সন্তান এমন একটি রাষ্ট্রে বসবাস করবে, যেখানে তাদেরকে তাদের চামড়ার রঙের পরিবর্তে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিচার করা হবে।

আজ আমি একটি স্বপ্ন দেখছি।

আমি স্বপ্ন দেখি নৃশংস বর্ণবাদীতে পূর্ণ এবং ঠোঁটে হস্তক্ষেপ ও নেতিকরণের শব্দ জমে থাকা একজন গভর্নরের উপস্থিতির পরও, একদিন আলবামায় ছোট ছোট কৃষ্ণাঙ্গ বালক-বালিকারা ছোট ছোট শ্বেতাঙ্গ বালক-বালিকাদের সাথে ভাই ও বোন হিসেবে একত্রিত হতে পারবে।

আজ আমি একটি স্বপ্ন দেখছি।

আম স্বপ্ন দেখি একদিন প্রতিটি উপত্যকাকে উত্তোলিত করা হবে, প্রতিটি পাহাড় ও পর্বতকে সমতলে পরিণত করা হবে, রূঢ় স্থানগুলোকে মসৃণ করা হবে, বক্র পথগুলোকে সরলরেখায় নিয়ে আসা হবে, আর ঈশ্বরের মহিমা এমনভাবে উদ্ভাসিত হবে যে সমগ্র মানবজাতি তা দেখতে পাবে একসাথে।

এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি দক্ষিণাঞ্চলে ফিরে যাবো। এই বিশ্বাস ধারণ করেই আমরা পাহাড়সম হতাশা থেকে আশাবাদী পরশপাথরকে বের করে নিয়ে আসতে পারবো। এই বিশ্বাস দিয়েই আমাদের জাতির শ্রুতিকটু হইচইকে আমরা ভ্রাতৃত্বের মোহনীয় ঐকতানে রূপান্তরিত করতে পারবো। আমরা একদিন অবশ্যই মুক্ত হবো, এমন বিশ্বাসের ফলেই আমরা একত্রে কাজ করতে পারবো, প্রার্থনায় যোগ দিতে পারবো, সংগ্রাম করতে পারবো, জেল খাটতে পারবো এবং মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারবো।

আর সেই দিনই ঈশ্বরের সকল সন্তান নতুন অর্থ নিয়ে গাইতে পারবে, “My country ’tis of thee, sweet land of liberty, of thee I sing. Land where my fathers died, land of the Pilgrims’ pride, from every mountainside, let freedom ring”

আর আমেরিকা যদি আসলেই একটি মহান রাষ্ট্র হতে চায়, তাহলে এই আশাবাদকে সত্যে পরিণত করতেই হবে। আজ নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রকাণ্ড পাহাড়ের চূড়াগুলো থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। নিউ ইয়র্কের বিশালাকার পর্বতগুলো থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। পেনসিলভেনিয়ার সুউচ্চ অ্যালেগেনিস পর্বতমালা থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। কলোরাডোর বরফাচ্ছাদিত রকি পর্বতমালা থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। ক্যালিফোর্নিয়ার বাঁকপূর্ণ ঢালগুলো থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। তবে শুধু এটুকুই নয়, বরং জর্জিয়ার স্টোন মাউন্টেইন থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। টেনিসির লুকআউট মাউন্টেইন থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। মিসিসিপির প্রতিটি পাহাড় ও উঁচু ঢিবি থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন। প্রতিটি পাহাড়ি এলাকা থেকে মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিন।

আর যখন এটি ঘটবে, যখন আমরা মুক্তির বার্তাকে ধ্বনিত হতে দিবো, যখন আমরা একে ধ্বনিত হতে দিবো প্রতিটি পল্লী গ্রামে, প্রতিটি রাজ্যে ও প্রতিটি শহরে, তখনই আমরা পারবো সে দিনটির দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে, যেদিন ঈশ্বরের সকল সন্তান, সাদা ও কালো, ইহুদি ও অ-ইহুদি, প্রোট্যাস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক, সবাই হাতে হাত মিলিয়ে পুরনো নিগ্রো আধ্যাত্মিক গানটি গাইতে পারবে, “অবশেষে মুক্তি! অবশেষে মুক্তি! সকল প্রশংসা তোমার হে সর্বশক্তিমান, অবশেষে আমরা মুক্ত হলাম!”

 

অনুবাদকের টীকা:

১ আব্রহাম লিংকন।

২ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত এক ধরণের প্রতিজ্ঞাপত্র, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট তারিখে বা চাওয়া মাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়া থাকে।

America বা My Country, ‘Tis of Thee মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় একটি দেশাত্মবোধক গান। ১৯৩১ সালে দাপ্তরিকভাবে The Star Spangled Banner গানটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার আগে অনেকগুলো গানের ভেতর My Country, ‘Tis of Thee-ও জাতীয় সঙ্গীতের মতো গাওয়া হতো।

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।