শিবলী নোমান
বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনৈতিক সাহিত্যে আগ্রহী পাঠকশ্রেণির পছন্দের তালিকায় মহিউদ্দিন আহমদ বেশ উপরের দিকে আছেন, সমসাময়িক কালে এমন মন্তব্য সম্ভবত অত্যুক্তি হবে না। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি শীর্ষক বইটি প্রকাশের মাধ্যমে আলোচনায় আসা মহিউদ্দিন আহমদ যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখকদের ভেতর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি অধিকার করে আছেন, তা বেশ স্পষ্ট।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ ধুমকেতুর ন্যায় আগত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদকে লেখার বিষয় হিসেবে নির্বাচিত করে মহিউদ্দিন আহমদ যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অচিরেই তা প্রমাণিতও হয়েছিল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রাথমিক সময়ে রাজনীতির অপরিহার্য এই কুশীলবকে নিয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সাহিত্যে যে শূন্যস্থানজনিত ধোঁয়াশা বিরাজমান ছিল, তা দূর করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বইটি।
এরপর একে একে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত দলটির কর্মকাণ্ড, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়কাল, হাল আমলের এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল নিয়ে তাঁর রচিত বইগুলো বেশ আলোচিত হয়েছে। একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মওলানা ভাসানী, সিরাজুল আলম খান ও সিরাজ সিকদারের রাজনীতি নিয়ে পৃথক বই রচনা করেছেন, তাঁর মনোযোগ পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ঐ এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ক্ষমতার ইতিহাসও। তবে মহিউদ্দিন আহমদ রচিত বইসমূহ উল্লিখিত তালিকার ভেতরই সীমাবদ্ধ নয়। মূলত তাঁর রাজনৈতিক সাহিত্য এ রচনার মূল আলোচ্য বলে সে ধরনের বইগুলোর নামই শুধু উল্লেখ করা হলো।
মহিউদ্দিন আহমদের রাজনৈতিক সাহিত্য আগ্রহী পাঠকমহলে সমাদৃত হওয়ার দুইটি কারণ শনাক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত, তাঁর লিখনশৈলী বেশ সুখপাঠ্য, সাধারণ পাঠক তাঁর লেখা বেশ দ্রুত পাঠ করতে সক্ষম হন। সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঠকের আকাঙ্ক্ষিত ভঙ্গিতে লিখতে পারা যে কোন লেখকেরই দারুণ গুণ, তা স্বীকার করতেই হয়। দ্বিতীয়ত, নিজেকে ইতিহাস অনুসন্ধানে আগ্রহী একজন গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মহিউদ্দীনের সফলতা। সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে এই মুহূর্তে সম্পৃক্ততা না থাকা; নিজে যে দলের কর্মী ছিলেন সেই দল সম্পর্কেই প্রথম বইতে প্রায় নির্মোহ সমালোচনা করা; বৃহৎ পাঠকের আগ্রহ জাগানিয়া বিষয় নির্ধারণ এবং বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা ব্যবসাসচেতন প্রকাশনা সংস্থাকে নিজের প্রথম বইগুলোর প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে পাওয়ার মাধ্যমে মূলত এই বিষয়টি সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয়। এই দুইটি বিষয়ের ফলশ্রুতিতে মহিউদ্দিন আহমদের রাজনৈতিক সাহিত্যগুলো এখনো পাঠক কর্তৃক সমাদৃত হচ্ছে, কিছুদিন পরপর বইগুলোর নতুন সংস্করণ প্রকাশ যার প্রমাণ; অন্যদিকে, তাঁর যে কোন নতুন প্রকাশিত রাজনৈতিক সাহিত্য সম্পর্কেই পাঠক অপেক্ষমান থাকছেন।
তবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মতো রহস্যময় ও ঝুঁকিপূর্ণ চোরাপথ নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে মহিউদ্দিন আহমদের চতুরতাও হয়তো সচেতন পাঠকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। যেমন, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদের দুই পর্বে প্রকাশিত আলোচনা থেমে যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে এসে, বিএনপিকে নিয়ে তাঁর রচনাও কোন এক অদ্ভুত কারণে হাল আমল পর্যন্ত পৌঁছায় না। একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে ইতিহাস লেখা যায় না বা লেখা ঠিক নয়, সেই যুক্তি এখানে টিকবে না কারণ আরও বেশ কয়েক বছর আগেই এক-এগারোর ঘটনা নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদই দারুণ সুখপাঠ্য এক বিবরণী প্রকাশ করেছেন। তবে সময় চলে যায় নি, এমন যুক্তি তুলে ধরলে উভয় পক্ষের জন্য আপাতত অপেক্ষাই ভরসা। আবার বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে মহিউদ্দিনের সুচতুর লেখনী কখনো কখনো সুবিধাবাদিতা হিসেবেও আখ্যায়িত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, যদিও তা অত্যন্ত সূক্ষ্মতা ও দক্ষতার সাথে লিখিত।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে, একজন লেখক বা গবেষককেই কি সবকিছু নিয়ে কাজ করার দায়টি নিতে হবে? দেশের অন্যান্য লেখক-গবেষক তাহলে কেন প্রশ্নের মুখে পড়বেন না? এই প্রশ্নদ্বয়ের যৌক্তিকতা স্বীকার করেই বলতে হয়, নিশ্চিতভাবেই মহিউদ্দিন আহমদের প্রকল্পগুলো তাঁর লেখনীর চতুরতাসমেত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যে প্রচণ্ড গুরুত্ববহ সংযোজন। কিন্তু লেখকের চতুর মনোবৃত্তির সাথে কোন কোন সন্দেহবাতিকগ্রস্ত পাঠকের মনে যদি লেখকের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির সম্ভাবনা উঁকি দেয়, তাহলে পছন্দের লেখক কর্তৃক পাঠকের প্রতারিত বোধ করার সম্ভাবনাটিকেও একেবারে ফেলে দেয়া যায় না।
এক্ষেত্রে মহিউদ্দিন আহমদের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ Dream Merchant একটি দারুণ উদাহরণ হতে পারে। এই বইটির উপশিরোনাম Story of BRAC। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের কর্মী থাকাকালে লেখকের অর্জিত দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার একটি অংশই ইংরেজি ভাষায় লিখিত ক্ষুদ্র কলেবরের এই বইটিতে উঠে এসেছে। তবে বইটি যে আসলে লেখকের ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা, তা কিন্তু বইয়ের নামটি থেকে বোঝার উপায় নেই। বরং এই সম্ভাবনা থাকে যে, ব্র্যাক ও বাংলাদেশে এনজিও কর্মকাণ্ড নিয়ে আগ্রহী পাঠক বইটি তুলে নিতে পারেন। তবে অনলাইনের এই যুগে বইয়ের ভেতরের কয়েক পাতা দেখার সুযোগ সমৃদ্ধ বই ক্রয়ের সাইট থেকে নিলে, এই বিড়ম্বনায় পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে, সেই যুক্তিটিও মাথা পেতে নিতেই হয়।
কিন্তু মহিউদ্দিন সাম্প্রতিক কিছু গ্রন্থে তাঁর লেখা ভূমিকাই আরো একবার লেখকের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলছে। যেহেতু, নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠকমহলে মহিউদ্দিন আহমদের জনপ্রিয়তা এখন বেশ উপরে, তাই তাঁর লেখা বইগুলোর ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। আর এ কারণেই মহিউদ্দিন আহমদের কাছে দেশের প্রকাশকরা, বিশেষ করে বইমেলার আগে আগে লেখা বা বই চাবেন, তা বেশ স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে মওলানা ভাসানীকে নিয়ে প্রায় সাড়ে চারশো পৃষ্ঠার একটি বই যখন মহিউদ্দিন আহমদ দেড়-দুই মাসের ভেতর লিখে ফেলেন প্রকাশকের চাহিদাপত্র পাওয়া মাত্র, তখন পাঠকের সেই সন্দেহ তো উসকে উঠতেই পারে বোধ করি।
এক্ষেত্রে এই সন্দেহকে আরো শক্তিশালী করতে পারে সম্প্রতি প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের দুইটি গ্রন্থ, তেহাত্তরের নির্বাচন ও চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ। মহিউদ্দিনের পূর্বপ্রকাশিত রাজনৈতিক সাহিত্যসমূহের কথা মাথায় রেখে এই গ্রন্থ দুইটি পড়ার কথা ভাবলে পড়তে গিয়ে পাঠক হয়তো হোঁচট খাবেন। বই দুইটি মহিউদ্দিন আহমদের মৌলিক কোন রচনা নয়, বরং ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচন ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে সেই সময়ে গণকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদসমূহের সংকলন। জানা মতে, ১৯৭৫ সালের পূর্বে একদলীয় শাসনের উত্থান সংক্রান্ত সমধর্মী আরেকটি বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
এক্ষেত্রে প্রস্তাব হলো, এ ধরনের ঐতিহাসিক দলিলসমূহকে বই আকারে সংকলন করা কোনভাবেই অন্যায় নয়, বরং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ ধরনের একটি সংকলিত বইয়ে নিজেকে লেখক হিসেবে উল্লেখ করা যায় কিনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখিত বইতে মহিউদ্দিন আহমদকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে অন্যদের লেখার বিশাল বিশাল উদ্ধৃতি হুবহু তুলে দিতে দেখা গিয়েছে, তবে সেখানেও মহিউদ্দিনের নিজস্ব বয়ান ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। কিন্তু, তেহাত্তরের নির্বাচন শীর্ষক গ্রন্থের ভূমিকা বাদ দিলে তিনশ পৃষ্ঠার অধিক বইটিতে মহিউদ্দিনের নিজস্ব কোন বক্তব্য নেই, তাহলে তিনি লেখক হন কী করে? এক্ষেত্রে নিজেকে সংকলক বা সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা গেলে প্রশ্নের বোঝা কিছুটা কমতো বটে, তবে সম্ভবত বেকসুর খালাস মিলতো না।
কারণ, বইটিতে গণকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সংকলনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ত্রুটি একেবারে খালি চোখে ধরা পড়ে। যেমন, অন্তত দুইটি সংবাদের শেষে তিন বিন্দু (…) ব্যবহার করে সংবাদটি অসম্পূর্ণ রেখে শেষ করা হয়েছে, যার কোন ব্যাখ্যা কোথাও নেই। এছাড়া অন্য কোন সংবাদ সংক্ষিপ্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে কিনা সেটিও বলা নেই। আবার বইতে মূল পত্রিকার ছবি থেকে দেখ যায়, অন্তত একটি সংবাদ ছবিতে দৃশ্যমান একটি অনুচ্ছেদকে বাদ দিয়ে বইতে মুদ্রিত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনে হয়, গণকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রথম অংশগুলোই শুধুমাত্র বইতে প্রকাশ করা হয়েছে, ভেতরের পাতায় বিভিন্ন সংবাদের অবশিষ্ট অংশ প্রকাশ করা হয় নি। মহিউদ্দিন আহমদের দিক থেকে এসব বিষয়ে কোন বক্তব্য বইয়ের ভূমিকায় না থাকার ফলে আগ্রহী পাঠক নিঃসন্দেহেই বিভ্রান্তিতে পড়বেন। তাই বলা যেতে পারে বইটির সংকলিত হলেও সংকলন কর্মটি ভালোভাবে সমাধা করা হয় নি।
অন্যদিকে, মহিউদ্দিন তেহাত্তরের নির্বাচন বইটির ভূমিকায় বলেছেন, সেই সময়ে পত্রিকায় ব্যবহৃত ভাষার স্থলে সংবাদগুলোকে আজকের প্রচলিত বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে। এটিকে সম্পাদনা কর্ম হিসেবে ধরে নিলে, বইটির সম্পাদনাগত ত্রুটির বিষয়ও নজরে আনতে হয়। বইতে বিভিন্ন সংবাদের ভেতর এমন কিছু শব্দ চলে এসেছে, যার ফলে পুরো বাক্যের অর্থ অবোধগম্য হয়ে পড়েছে। তথ্যগত বিভ্রাট থেকে গেছে কোন কোন জায়গায়। যেমন দেশের ৯২ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ১২ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করার ফলে দেশে ৮০ শতাংশ ভুতুড়ে, অশনাক্তকৃত জনগোষ্ঠী থেকে গিয়েছে। এক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনা হলো, গণকণ্ঠ-র মূল পত্রিকা থেকে অপটিক্যাল ক্যারেকটার রিকগনিশন তথা ওসিআর বা সমধর্মী কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেখাগুলোকে কম্পিউটারে পাঠযোগ্য করে তোলা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের পর অপরিহার্য সম্পাদনা কর্মটি যদি সমাধা করা না হয়, তাহলে তো কাজটি ত্রুটিযুক্ত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর এক্ষেত্রে যদি এ ধরনের প্রযুক্ত ব্যবহৃত না হয়, তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় যে সম্পাদক হিসেবেও কি মহিউদ্দিন আহমদ নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন?
বর্তমান লেখাটি নিঃসন্দেহেই মহিউদ্দিন আহমদের সম্প্রতি প্রকাশিত তেহাত্তরের নির্বাচন শীর্ষক গ্রন্থের সমালোচনা, হয়তো কিছুটা তীব্র ও বক্রও বটে। কিন্তু সমালোচনাটিকে মহিউদ্দিনের রাজনৈতিক সাহিত্যের অনুরাগী পাঠকের হতাশামিশ্রিত সমালোচনা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। আর এই হতাশার কারণটিও মহিউদ্দিন আহমদ স্বয়ং। তেহাত্তরের নির্বাচন শীর্ষক গ্রন্থটিকে নিজের অপরাপর গ্রন্থের ন্যায় সেই সময়ের মানুষদের বক্তব্যসমেত উপস্থাপনের কাজটি না করে পরবর্তী গবেষকদের জন্য তিনি কাজটি রেখে দিয়েছেন, ভূমিকা পড়ে তাই জানা যায়। এটুকু মেনে নেয়া গেলেও, গণকণ্ঠ ব্যতীত সেই সময়ের অন্যান্য পত্রিকার ভাষ্য তুলে ধরলে আলোচ্য নির্বাচনটি নিয়ে পাঠকের বোঝাপড়া আরও পরিষ্কার হতো স্বীকার করে নিয়ে, কাজটি না করার পেছনে মহিউদ্দিন যে যুক্তি দিলেন, তার ফলেই সেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির সন্দেহটি মাথা চাড়া দিয়ে যায়। তিনি কইলেন,
আমার হাতে অত সময় ছিল না।
পাঠক হয়তো বলবেন, “হে ধরণী, দ্বিখণ্ডিত হও।”
তবে লেখক ও প্রকাশকগণ যেহেতু হাওয়া খেয়ে জীবন ধারণ করেন না, তাই তাদের ব্যবসায়িক ও মুনাফাকেন্দ্রিক হওয়ার ভেতর কোন সঙ্কট নেই, বরং ব্যবসা ও মুনাফাকে লক্ষ্য হিসেবে ধরা হলে তা দিনশেষে দেশের প্রকাশনা শিল্পের জন্য ভালো ফল নিয়ে আসার সম্ভাবনায় পূর্ণ। কিন্তু তাই বলে সময় স্বল্পতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার দায়টি কি মহিউদ্দিন আহমদ এড়িয়ে যেতে পারেন? ব্যবসা বা মুনাফা যত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যই হোক, অধিক সন্তান প্রসব করা যে মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর তা যদি মহিউদ্দিন আহমদও ভুলে যেতে বসেন, তাহলে খোদা না খাস্তা, তাঁর পাঠকদের জন্য সামনে হয়তো আরো আরো হতাশাই অপেক্ষা করছে।