শিবলী নোমান
১২ নভেম্বর, ২০১০, শুক্রবার
সকাল নয়টায় হোটেলের লবিতে সবাইকে থাকতে বলা হয়েছিল। তাই সকাল আটটার ভেতর ঘুম থেকে উঠে হোটেলের দোতালায় গেলাম নাস্তা করতে। জাফর ভাই বা সূচনা আপুর রুম নাম্বার জানা না থাকায় একাই গিয়েছিলাম। রেস্টুরেন্টটা লম্বা একটা হলঘরে, সেখানে সারি সারি টেবিল-চেয়ার পাতা। প্রতি টেবিলেই মানুষ রয়েছে এবং অসম্ভব ব্যস্ততায় তাদের খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
নাস্তা করতে গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড! নাস্তার জন্য এত এত ধরনের খাবার, দুধ, ডিমের কুসুম সেদ্ধ, পোর্কের বিভিন্ন খাবার, সেদ্ধ ভাত, বিভিন্ন ধরনের পাউরুটি, মাখন, জ্যাম, জেলি আর চা, কফি। এছাড়া অনেক কিছু আছে যার বেশির ভাগের নামই জানি না, কী না কী মিশিয়ে কী বানানো জানি না তাই সবচেয়ে সহজ উপায় বেছে নিলাম। পাউরুটি, ডিম আর কফি খেলাম। জানালার পাশে বসেছিলাম, বাইরে জাপানের ব্যস্ত রাস্তায় ব্যস্ত মানুষদের দেখা যাচ্ছিলো।
আশেপাশে আমার সমবয়সীদের বেশ কয়েকটি দল চোখে পড়লো। সবাই এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে এসেছে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। কোন ঝামেলায় পড়তে চাচ্ছিলাম না দেখে কারো সাথে কথা বললাম না। আসলে নতুন দেশে আসার ভয়টা ভালোভাবেই কাজ করছিল।
নাস্তা শেষে রুমে ফিরে রেড ক্রিসেন্ট ইউনিফর্ম পরে নিচে লবিতে আসলাম নয়টা বাজার আগেই। দেখি অনেকেই চলে এসেছে। সবাই সবার সাথে কথা বলে পরিচিত হচ্ছিলো। জাফর ভাই আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন রাতে আমি কোথায় ছিলাম। বললাম রুমেই ছিলাম। তিনি নাকি আমার রুমে গিয়ে কয়েকবার বেল দিয়েছেন কিন্তু আমি দরজা খুলি নি। ঢাকা থেকে নাকি আমাকে ফোনও করেছিল। আমি বললাম ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বুঝলাম জাফর ভাইয়ের মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়েছে এই ঘটনায়।
আমাদেরকে হোটেল থেকে হাঁটিয়ে হোটেলের সাকুরা হলে নিয়ে যাওয়া হলো। হলগুলো প্রিন্স চেইন হোটেলেরই অন্য একটি অংশ কিন্তু হোটেল থেকে সরাসরি সেখানে যাওয়া যায় না, যেতে হলে মূল হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে হয় মিনিট পাঁচেক। সাকুরা হলে বর্ণক্রমানুসারে সবগুলো দেশের প্রতিনিধিদের বসানোর ফলে আমরা দ্বিতীয় টেবিলটাই পেয়ে গেলাম। এখানে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।
অনুষ্ঠানে জাপানিজ রেড ক্রসের জেনারেল ডিরেক্টর শুনসুকি মিতসুয়ি উদ্বোধন ঘোষণা করলেন। এরপর আমাদেরকে জানানো হলো এ বছর এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে জাপান ছাড়া এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ২২টি দেশ ও ২টি অঞ্চল থেকে ৪৬ জন অংশ নিচ্ছে এবং সাথে রয়েছে পাঁচটি দেশের পাঁচজন পর্যবেক্ষক। উদ্বোধনের পরই আমাদেরকে হাতে লেখা আইডি কার্ড দেয়া হলো, যেন আমরা সহজেই একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারি।
উদ্বোধনের পর আমাদেরকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো জাপান রেড ক্রসের সদর দপ্তরে। প্রায় পনেরো মিনিটের দূরত্ব ছিল সেটি। হাঁটতে হাঁটতে আমরা জাপানের উঁচু উঁচু দালান আর রাস্তায় ব্যস্ত মানুষদের চলাফেরা দেখছিলাম। জাপানের রাস্তায় চলমান গাড়িগুলো দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। সবগুলো গাড়ি ঝকঝকে চকচকে। বাসগুলো দেখেও মনে হচ্ছিলো আজ সকালেই যেন প্রথম রাস্তায় নেমেছে। আমাদের দেশে এসব গাড়িই রিকন্ডিশন হয়ে যায় আর আমরা তা ব্যবহার করি, ভেবে খারাপই লাগলো।
সদর দপ্তরে আমাদের সাথে জাপানিজ রেড ক্রসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সৌজন্য সাক্ষাত করলেন। বিভিন্ন দেশের ডেলিগেশন আলাদাভাবে তার সাথে একটি হলরুমে শুভেচ্ছা বিনিময় করলো। হলরুমটি ছিল বেশ বড়, যার মাঝে একটি টেবিল ছিল কিন্তু কোন চেয়ার ছিল না। রুমের মাঝখানে ভাইস-প্রেসিডেন্ট এসে দাঁড়িয়েছিলেন আর সবগুলো ডেলিগেশন দাড়িয়েছিল দুই পাশে। বাংলাদেশ ডেলিগেশনের পক্ষ থেকে আমি তাকে একটি কোট পিন পরিয়ে দিলাম এবং জাফর ভাই তাকে একটি ক্রেস্ট, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পোলো শার্ট ও মগ উপহার দিলেন।
এরপর আমরা আবারও সবার সাথে পরিচিত হতে শুরু করলাম। সেখানেই আমি দেখলাম আমার রুমমেট ইন্দোনেশিয়ার জালু তার লাগেজ নিয়ে হাজির। সে ট্রেনে এসেছিল এবং কোন একটা সমস্যার কারণে নির্ধারিত দিনের একদিন পর পৌঁছেছে। সে আমাকে এগুলো বলতে বলতেই আমার সাথে পরিচিত হলো।
ইন্ডিয়ান রেড ক্রসের দুইজন আমাদের সবাইকে তাদের পক্ষ থেকে কলম উপহার দিলো এবং পরিচিত হলো। আমরা জানতে চাইলাম তারা ভারতের কোথা থেকে এসেছে। একজন জানালো সে মধ্য প্রদেশ থেকে এসেছে, অন্যজন এসেছে চান্দিগড় থেকে।
এর ভেতর পাকিস্তানের একজন সূচনা আপুকে নাকি বলে বসেছে সে যেহেতু বাংলাদেশের তাই আমরা নাকি আত্মীয়। আমি সূচনা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি উত্তরে কিছু বলেছেন কিনা। তিনি আমাকে জানালেন কিছু বলেন নি। আমি বললাম, আপনার কিছু একটা বলা উচিত ছিল।
আমরা বিভিন্ন ডেলিগেশনের সাথে ছবি তুললাম। জাপানিজ রেড ক্রসের জেনারেল ডিরেক্টর ছাড়াও ছবি তুললাম নেপাল ডেলিগেশনের ভিরাট, কপিলা ও তাদের সাথে আসা পর্যবেক্ষক তিলক স্যারের সাথে। তিলক স্যার আবার হোটেলে জাফর ভাইয়ের রুমমেট। জাফর ভাই তাকে খুব সুবিধার লোক মনে করছেন না, কারণ সে নাকি সারা রাত কথা বলে আর ঘুমালে জোরে জোরে নাক ডাকে। তাতে জাফর ভাইয়ের ঘুমের সমস্যা না হলেও নামায পড়তে নাকি সমস্যা হয়। আমি কিছু ব্যক্তিগত ছবিও তুললাম। ছবিগুলো সূচনা আপুই তুলে দিল। এছাড়া মালয়েশিয়া ডেলিগেশনের অ্যাডলিন ও পুনামের সাথেও ছবি তুললাম।
আমরা আমাদের দুপুরের খাবার রেড ক্রস সদর দপ্তরেই সেরে নিলাম। বেশির ভাগ খাবারের সাথেই পরিচিত নয় বলে চিকেন ফ্রাই, জাপানি স্টাইলে রাধা মাখা মাখা ভাত আর ড্রিংকস খেয়ে নিলাম। সবাই একসাথে সেটাই ছিল প্রথম খাবার গ্রহণ। সে সময় আবার ফিলিপাইনের এস ডেলা ক্রুজ নাকি সূচনা আপুকে বলেছে যে, আপু দেখতে ওর গার্লফ্রেন্ডের মতো। আর একথা শুনে সূচনা আপু রাগে গজগজ করতে এসে আমাকে ঘটনাটা জানালো। আমি জোর করেও হাসি আটকাতে পারলাম না আর বললাম, তো কী সমস্যা! আসলে আমি সূচনা আপুর মেজাজ খারাপ হওয়ায় বেশ মজা পেয়েছিলাম।
দুপুরের খাবারের পর আমাদেরকে জাপানিজ রেড ক্রসের জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখানো হলো, যেটি সদর দপ্তরেই অবস্থিত। সেখানে আমরা দেখতে পেলাম রেড ক্রস আন্দোলনের শুরু যে বই লেখার মাধ্যমে, জ্যা হেনরি ডুনান্টের সেই ‘এ মেমরি অব সলফেরিনো’-র প্রাচীন একটি সংস্করণ; দেখতে পেলাম বিভিন্ন সময় জাপানিজ রেড ক্রসের বিভিন্ন পোশাক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ছবি। আমরা অনেক ছবিও তুলেছিলাম সেখানে। সবশেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সদর দপ্তরের বাইরে আমাদের একটি গ্রুপ ছবি তোলা হলো।
এরপর আমরা আবার সাকুরা হলে চলে এলাম। সেখানে আমাদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম হলো এবং আমাদেরকে কিছু পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখানো হলো। এসব প্রেজেন্টেশনে পুরো প্রোগ্রাম সম্পর্কে আমাদেরকে ব্রিফ করা হলো এবং জাপানের মানুষের জীবন যাপনের পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেয়া হলো। আমাদেরকে কিছু জাপানি শব্দও শিখিয়ে দেয়া হলো। যেমন, ধন্যবাদ (আরিগাতো গোজায় মাসতা), শুভ সকাল (ওহায়ো গোজায় মাসতা) ইত্যাদি। একইসাথে এটিও বলে দেয়া হলো যে, জাপানে ২০ বছরের নিচে ধূমপান ও মদ্যপান নিষেধ তাই আমরা কেউ যেন তা না করি।
পাশের সাজাকা হলে একটি চা-বিরতি দিয়ে আবারও আমাদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম চলতে থাকলো। আমাদেরকে এটিও জানিয়ে দেয়া হলো যে বিভিন্ন দেশ থেকে যারা এই প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে, জাপানে থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন ক্ষতি হয় বা কেউ যদি দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রাণ হারায়, তার জন্য সবার নামে জাপানিজ রেড ক্রসের পক্ষ থেকে জীবন বীমা করা হয়েছে। বিষয়টা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমি যদি মারাই যাই, তাহলে বীমার টাকা দিয়ে আমি কী করবো! বীমার কাগজপত্রের সাথে আমাদেরকে একটি কাগজ দেয়া হলো, যেখানে একটি জাপানি গান লেখা ছিল। আর বলা হলো এই গান আমাদের এই পুরো প্রোগ্রামে আমরা অনেকবার গাইবো। গান লেখা কাগজটি পড়ে দেখলাম গানটার নাম ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’।
ওরিয়েন্টেশনের শেষে রেড ক্রসের কর্মকর্তা মিয়ো সাইতো আমাদের সবার কাছ থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করছিল। তখন কেউ একজন তথ্য দিয়ে বলেছিল “ওকে ওকে”, অর্থাৎ সবকিছু ঠিক আছে। এভাবে বার বার “ওকে ওকে” বলায় মিয়ো নিজে খুব মজা পেলো, এবং কারো তথ্য যখন ঠিক হচ্ছিলো তখন কেউ ‘ওকে’ বললে সে নিজেই মাথা নেড়ে বলছিল “ওকে ওকে ওকে ওকে”, “ওকে ওকে ওকে ওকে”।
আমার কাছে মিয়ো যখন আমার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিতে আসলো তখনই রিকা তাকে ডাক দিলো। তখন সে এত জোড়ে ‘হাই’ শব্দটি বলে উঠলো যে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম আমার কোন কাজে হয়তো আমাকে বকে দিয়েছে। পরে বুঝলাম যে আমাদেরকে কেউ ডাকলে আমরা যেমন উত্তর দেই ‘জ্বি’; একইভাবে জাপানিরা উত্তর দেয় ‘হাই’ বলে। মিয়ো সাইতোর চোখও দেখলাম রিকার মতোই বড় বড়। সব জাপানির চোখ ছোট ছোট হয়, এই তথ্যটা যে ভুল তা বুঝতে পারছিলাম।
ওরিয়েন্টেশন শেষে আমরা যখন হোটেলে ফিরছিলাম, তখন একটি দোকানে থাকা শো-পিস জাফর ভাইয়ের পছন্দ হয়ে গেলো। আমাকে তিনি বললেন সেটির দাম কতো তা দেখতে। শো-পিসটা ছিল একটি সাধারণ ফ্রেমে তিনটি আলাদা রঙের কৃত্রিম গোলাপ ফুল। দাম দেখলাম ২২ হাজার ইয়েন। প্রায় ৩০০ ডলার! আমি জাপানে সব মিলে নিয়েই গিয়েছি ৩০০ ডলার। আমি যে কী কী কিনে ফিরতে পারবো তা তখনই বুঝতে পেরে প্রমাদ গুনলাম। আর জাফর ভাই দামটা শুনে বললেন, “সাবাস শালা, বাঘের বাচ্চা!” কাকে বললেন কিছুই বুঝলাম না।
প্রথমদিন সন্ধ্যায় ছিল ওয়েলকাম পার্টি। সবাই পার্টির জন্য সন্ধ্যার পর আবার চলে এসেছিল সাজাকা হলে। সেখানে আমাদের সাথে জাপানি সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দিতে একটি জাপানি পরিবারকে জাপানের সাংস্কৃতিক পোশাক পরিয়ে আনা হয়েছিল। সেই পরিবারের পুরুষ সদস্য সামুরাই পোশাক পরে একটি বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিলো আর মহিলাটি নাচছিলো। তাদের সাথে তাদের বাচ্চা ছেলেটিও পরেছিল জাপানের ঐতিহ্যবাহী সামুরাই পোষাক।
আমরা বারবার সবার সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম। কে কোন্ দেশ থেকে এসেছে তা মুখস্ত করে নিচ্ছিলাম। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, দুপুর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের চারজন, আর আফগানিস্তানের একজন, অর্থাৎ পাঁচজন সবসময় একসাথে আছে। ভারতীয় আর পাকিস্তানিদের এমন একসাথে থাকাটা আমি মিলাতে পারছিলাম না। আর আমি নিজেও চাচ্ছিলাম না পাকিস্তানিদের সাথে নিজে থেকে খুব বেশি কথা বলতে।
ওয়েলকাম পার্টিতেও খাবারের তালিকায় আমার খাওয়ার মতো খুব বেশি কিছু পেলাম না। বেশির ভাগ খাবারেই পোর্ক রয়েছে, তবে কোন্ খাবারে কী আছে তা ছবির মাধ্যমে দেখিয়ে দেয়ায় আমাদের সবার জন্যই ভালো হলো। কারণ খাবার নিয়ে সবারই কোন না কোন ধরনের বিধিবিধান ছিল। সবজি জাতীয় খাবার ছিল, কিন্তু ফল বা সবজি খাই না বলে সেগুলো খেতে পারলাম না। যেহেতু বেশির ভাগ খাবারেই কোন না কোনভাবে পোর্ক অর্থাৎ শূকরের মাংস ছিল তাই এবারও মূলত চিকেন ফ্রাই দিয়েই খাবারটা চালিয়ে নিতে হলো। এর ভেতর আমি এটুকু বুঝে গিয়েছি যে জাপানে আমার খাওয়া-দাওয়া মূলত মুরগির উপর দিয়েই যাবে।
আমি জাপানিজ রেড ক্রসের কর্মকর্তা আকিহিতো সাইতোর সাথেও ছবি তুললাম। সে ছিল অনেক বেশি লম্বা। ওর পাশে আমাকে নিতান্তই খাটো মনে হচ্ছিলো। এছাড়া তিমুর লেস্তের ডিনো, ইন্দোনেশিয়ার জালু ও কাদেখ, টোঙ্গার মোনার সাথে ছবি তুললাম। ভারতের ডেলগেশনের সাভিয়া আর মনিশের সাথে ছবি তুলে থাইল্যান্ড ডেলিগেশনের জুন ও স্যালির সাথে ছবি তুললাম। আরো ছবি তুললাম আফগানিস্তানের নুরুল্লাহ, মালয়েশিয়ার পর্যবেক্ষক শুকরি স্যার ও মঙ্গোলিয়া ডেলিগেশনের বাতবিল্গুন, সত ও তাদের সাথে আসা পর্যবেক্ষক ব্যামবাসুরেনে ম্যাডামের সাথে; যদিও তখনো আমি বুঝি নি ব্যামবাসুরেন ম্যাডাম মঙ্গোলিয়ান রেড ক্রসের কর্মকর্তা। তাকে দেখতে সতের সমবয়সীই মনে হচ্ছিলো। আমি অনেক পরে আসল সত্যটা জানতে পেরেছিলাম।
সবার খাওয়া শেষ হলে আমাদেরকে বলা হলো এখন আমরা সবাই একসাথে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ গানটি গাবো। গানের তালে তালে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গানের কথাগুলো দেখানো হতে থাকলো। সবাই একটু আধটু গলাও মেলালো। গানের মূল কথা হলো এখানে আমরা সবাই সবার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং সবার সব সহযোগিতার জন্য আমরা একে অপরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গানের মাধ্যমে ওয়েলকাম পার্টি শেষ হলো। পার্টি শেষে আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম।
জাপানে আমাদের প্রথম দিনের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। আগামীকাল প্রতিটি দেশের ডেলিগেশন তাদের নিজ নিজ চ্যাপ্টার প্রোগ্রামে চিলে যাবে। আমাদের যেমন একেকটি জেলা, জাপানে জেলাকে বলা হয় চ্যাপ্টার। বাংলাদেশ ডেলিগেশনের জন্য নির্ধারিত চ্যাপ্টার ছিল চিবা, টোকিওর ঠিক পাশের চ্যাপ্টার।
হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ জালুর সাথে গল্প করে আমি শুয়ে পড়লাম। জালুদের চ্যাপ্টার প্রোগ্রাম হিরোশিমায়, ওদের অনেক ভোরে রওনা হতে হবে। তাই বেশি কথা হলো না আর।