শিবলী নোমান

মাস্টার

শিবলী নোমান

সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি না। আবার একদম কমও না। আকাশ হয়ে আছে কালো, আর একটু পর পর বাতাস দিচ্ছে। শরতের আকাশে সাদা মেঘ থাকার কথা, আর থাকার কথা কাশফুল। মাঝে মাঝে কাশুফুলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে বটে। কিন্তু সাদা মেঘের কোন খবর নেই। কালো মেঘেরাই যেন আকাশের ইজারা নিয়ে রেখেছে।

বৃষ্টির ফোঁটা চশমায় পড়ছে সাইদুর রহমানের। ঘর থেকে যে ছাতা নিয়ে তিনি বের হয়েছেন তার উপর অনেক আগেই বিশ্বাস হারিয়েছেন তিনি। জোরে হাওয়া বইলেই ছাতা উল্টে যাচ্ছে। আর কয়বার হাওয়ার আঘাত সইতে পারবে ছাতাটি তা ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ঝাপসা চশমা চোখে পথ দেখতে একটু অসুবিধা হলেও এটা কোন বড় বিষয় নয় তার কাছে। এই পথ-ঘাট সবই তার চেনা। বহুদিনের পরিচিত আপনজনের মতো। তবে সাইদুর রহমানের মনে আশঙ্কা একটাই, কালও যদি এমন মেঘ-বৃষ্টি থাকে তাহলে তো সমস্যা! আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তাও এগিয়ে যেতে থাকেন।

বড় মাঠটা পার হওয়ার সময় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ঐ তো স্কুলটা দেখা যায়। এই স্কুলেই টানা ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন সাইদুর রহমান। তিনি খুব মজা পান যখন ভাবেন যে এই স্কুলের কোন রুমে বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি যাদের কান টেনে শাস্তি দিতেন আর বেতের ভয় দেখাতেন তাদের অনেকেই আজ অনেক বড় জায়গায় চলে গেছে। এখন আর তারা গ্রামে আসে না, কিন্তু সাইদুর রহমান জানেন তার ছাত্ররা তাকে আর তাদের স্কুলকে ঠিকই মনে রেখেছে। আর একদিন তারা হঠাৎ করে চলে আসবে।

হাওয়ার নতুন একটা ঝাপটার পর আবারও হাটতে শুরু করেন সাইদুর রহমান। তিনি যাবেন ঢাকা শহরে। খুবই অপছন্দ করেন তিনি শহরটাকে। অপছন্দটা ঘেন্নার পর্যায়ে চলে গেছে। পেনশনের টাকা তুলতে কয়েকবার এই বাজে শহরটার এখানে সেখানে দৌঁড়াতে হয়েছে তাকে। নিজেকে স্কুল শিক্ষক পরিচয় দেয়ার পরও তেমন কোন ভাবান্তর হয় নি শহরের নাক উঁচু মানুষগুলোর। অথচ এই গ্রামে তার কত সম্মান। গ্রামের থেকে এই বাজে শহরটায় যায় বলেই তো তার ছাত্ররা আর গ্রামে ফিরে আসে না। এরপর থেকেই তিনি ভেবে রেখেছিলেন আর যাই হোক, ধুলাবালির নোংরা ঐ শহরে আর নয়!

কিন্তু ঝুমকার জন্য আজ আবার তার ঐ শহরে যেতে হচ্ছে। ঝুমকা সাইদুর রহমানের মেয়ে। সাইদুর রহমানের কাছের মানুষ বলতে এই একজনই। ঝুমকাকে জন্ম দিতে গিয়েই ওর মা মারা গেলো। তারও কিছুদিন পর সাইদুর রহমান বুঝতে পারলেন তার মেয়ে কানে শুনতে পায় না, বলতে পারে না কথাও। তারপরও মেয়েকে বড় ভালোবাসেন তিনি। বহুদিন কোন নাম ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছিল ঝুমকা। মাস্টারের মাইয়া, পিচ্চি, গেন্দি, যে যা খুশি ডাকতো তাকে। অনাগত সন্তানের জন্য ঝুমকা বানিয়ে রেখেছিল তার মা। এক ছাত্রের কী এক দরকারে সেই ঝুমকা বিক্রি করা টাকা ছাত্রটিকে দিয়েছিলেন সাইদুর রহমান। তিনি জানতেন আর কখনো ঝুমকা বানিয়ে দিতে পারবেন না মেয়েকে। তার ঘরের লক্ষ্মী ছিল তার স্ত্রী। কীভাবে কীভাবে যেন টাকা জমিয়ে ফেলতো। মেয়ের জন্য মায়ের রেখে যাওয়া ঝুমকা মেয়েকে দিতে না পারার কষ্টকে চাপা দিয়ে রাখতেই সাইদুর রহমান মেয়ের নাম রেখে দিলেন ঝুমকা।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুমকার সমস্যাও বেড়েছে। হঠাৎ করেই হাটার শক্তি হারালো সে। সদরের ডাক্তাররা বলেছিল অপুষ্টির জন্য এমন হয়েছে, আর ঠিকও হয়ে যাবে সময়ের সাথে সাথে। কিন্তু ঠিক হয় নি। সাইদুর রহমানও বেশি চেষ্টা করেন নি। টাকা কোথায়!

এরপর থেকে সাইদুর রহমানের কষ্ট আরো বেড়ে গিয়েছিল। ঘরে চব্বিশ ঘন্টা বিছানায় পড়া একজন থাকলে কাজ অনেকে বেড়ে যায়। তিনি বুঝতে পারছিলেন স্কুলের চাকরি ছেড়ে না দিলে তিনি মেয়ের দেখাশোনা করতে পারবেন না ঠিকমতো। কিন্তু এত পরিশ্রমের ভেতরও সাইদুর রহমানের আনন্দের ঐ একটাই জায়গা ছিল। বাচ্চাদের পড়িয়ে কী যেন মজা পেতেন খুব! তাই সাইদুর রহমান স্বার্থপর হয়েছিলেন। তিনি বুঝতেন মেয়েও চায় বাবা ঘরে থাকুক। কিন্তু কথা বলতে পারে না এমন একটা মানুষের সাথে তো দিনের পর দিন সময় কাটানো যায় না। সেই সময় থেকে রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় বাবার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতো ঝুমকা। সাইদুর রহমান কিছুদিন পরই ঐ চোখের দিকে তাকানোর সাহস হারিয়েছিলেন। কী চাহনি! যেন আগুন বেরুচ্ছে! মেয়েটা বাবার কাছে কোন আবদার করে নি কখনো। সাইদুর রহমানই এটা সেটা এনে দিবেন বলেছিলেন, মেয়ে কানে শুনতে না পারলেও ইশারায় বলতেন। একবার বেতন পাওয়ার দিন হাওয়াই মিঠাই এনে দিবেন বলেছিলেন। সেদিন বেতন হলো না। হাওয়াই মিঠাইও আনা হলো না। সাইদুর রহমান আবারও মেয়ের সেই চাহনি দেখলেন।

সপ্তাহ দুয়েক ধরে মেয়েটার শরীর একটু বেশি খারাপ। জ্বর কমছে না কোনভাবেই, আর খেতেও পারছে না কিছু। চাকরি ছাড়ার পর গোটা কতক প্রাইভেট পড়িয়ে কোনভাবে দিন কাটে সাইদুর রহমানের। বুড়ো মাস্টারকে কেউ প্রাইভেট পড়াতে রাখতেও চায় না। আবার যারা রাখে তারা বেতনটাও ঠিকমতো দিতে চায় না। সাইদুর রহমান মুখ ফুটে তা চাইতেও পারেন না। কোরবানির ঈদে ঝুমকা গরুর মাংস খেতে চায় কিনা জানতে চেয়েছিলেন তিনি। তখন ভেবেছিলেন ঈদের আগে কোন না কোন প্রাইভেটের টাকাটা পেয়ে যাবেন। মাংস অপছন্দ করা ঝুমকাও কেন জানি খেতে রাজি হয়েছিল। এজন্যই হয়তো কোন প্রাইভেট থেকেই টাকা পেলেন না তিনি। চাইতেও পারলেন না। কিন্তু ঝুমকাকেও জানালেন না কিছু।

অনেক ভেবে মোবারকের বাসায় গিয়েছিলেন সাইদুর রহমান। মোবারক এখন ইউপি মেম্বার। এক সময় সাইদুর রহমানের ছাত্র ছিল। সাইদুর রহমানকে মোবারকের বৈঠক খানায় বসতে দেয়া হয়েছিল। ঘরের সাজ-সজ্জা দেখে মুগ্ধ তিনি। সেগুন কাঠের টেবিলের ঐপাশে বিশাল চেয়ার, চাকা লাগানো। ঘরের এক কোনায় বিশাল টিভি, মখমলের মতো কার্পেট বিছানো মাটিতে। কয়েক সেট সোফাও আছে, মাঝে টি-টেবিল। পুরো ঘর দেখে শেষ করার আগেই মোবারক ঘরে ঢুকলো। সাইদুর রহমানকে দেখে তার চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তির ভাব ফুটে উঠলো। তবে সাইদুর রহমানের বিশ্বাস তাকে দেখে নয় বরং অন্য কোন কারণে সে বিরক্ত হয়ে আছে।

সাইদুর রহমান অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিলেন কিছু টাকা ধার দেয়ার কথা। মোবারক রাজি হয় নি। সে বলেছে শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বেড়াচ্ছে এই খবর গ্রামে ছড়ালে বেইজ্জতি হবে। ছাত্রের উপস্থিত বুদ্ধিতে খুশিই হয়েছিলেন তিনি। তবে মোবারক জানতে চেয়েছিল টাকাটা কেন দরকার। কারণ জেনে অট্টহাসি দেয় মোবারক।

– এই কথা আগে কইবেন না! শোনেন, আমার কাছ থেকে ট্যাকা নিলেও কথা হইবো গ্রামে, আবার মাংস নিলেও হইবো। এর চেয়ে আপনারে একটা ভালো বুদ্ধি দেই স্যার?

– কী বুদ্ধি?

– ঢাকা যান। ঈদের দিন অনেক কসাই লাগে শহরে। একটা দুইটা খাসী বানাইতে পারলে টাকাও পাইবেন, আবার ভালো মতো কইতে পারলে যার খাসী তার গরুর মাংসও পাইবেন কিছু। আর না পাইলেও সমস্যা নাই তো। ট্যাকা তো পাইবেন, কিন্যা ফালাইবেন মাংস। ঢাকায় ঈদের দিন যারা মাংস টোকায়, হ্যারা সন্ধ্যায় সেই মাংস বেইচ্যা দেয়। কম দামে পায়া যাইবেন!

– এই বয়সে কসাই হতে বলছো বাবা!

– আরে কী যে কন স্যার। আমি কি আর কাউরে এইটা কইতাছি নাকি! আর আপনে এই গ্রামের মাস্টার, সবাই আপনারে সম্মান করে। সেইটা তো করবোই। একদিন ঢাকায় গিয়ে এই কাজ করলে কেউ কী জানতে পারবো? আর ঢাকায় কী কেউ জানে আপনি মাস্টার না কসাই! হে হে!

আর কিছু না বলে সাইদুর রহমান মোবারকের বৈঠক খানা থেকে বেরিয়ে যায়। বেরিয়ে যেতে যেতেই শুনতে পায় মোবারকের গলা।

– ঐ বশির হারামজাদা! তোরে না কইসি যারে তারে বৈঠক খানায় ঢুকাবি না। আগে জিগায় নিবি আমারে!

 

শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবে মোবারকের কথাটাই মনে ধরে সাইদুর রহমানের। ঢাকায় তো কেউ তাকে চিনে না। আর খাসী বানানোও খুব কঠিন হবে না। আগে কয়েকবার করেছেন। গ্রামের বাশার কসাইয়ের কাছ থেকে পুরনো কিছু ছুড়ি আর চাপাতি ভাড়া করে সে। কারণটা অবশ্য বলে না। শুধু বলে দেয় ঈদের দিন রাতে বাসায় গিয়ে টাকা আর ছুড়ি ফেরত নিয়ে যেতে।

ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায় সাইদুর রহমানের। ঈদের আগের রাত কিন্তু স্টেশনে তাও এত মানুষ দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় তার। ছোট একটা শহরে এত মানুষ আসে কোথা থেকে? তিনি ভেবেছিলেন স্টেশনেই ঘুমিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিবেন, কিন্তু এই হৈ-হট্টগোলে ঘুম আর হলো না তার। সারা রাত বসে থেকে আর ঝিমিয়ে কাটিয়ে দিলেন তিনি। চিন্তা হচ্ছিলো শুধু ঝুমকার জন্য। একা একা এই দুইটা দিন থাকতে পারলেই হয় মেয়েটা!

ঈদের সকালে চা দিয়ে বনরুটি ভিজিয়ে খেয়েই স্টেশন থেকে বেরিয়ে পড়লেন সাইদুর রহমান। বোধ হওয়ার পর এই প্রথম ঈদের নামাজ না পড়ে থাকলেন তিনি। হাটতে হাটতে রাজারবাগ এলাকায় চলে আসলেন। ততক্ষণে নামাজ শেষে সবাই কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করাই মুশকিল হয়ে গেলো রক্ত আর ময়লায়। আর তার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তো আছেই। আশেপাশের মানুষের কাছে তিনি জানতে চাইলেন কারো কসাই লাগবে কিনা। অনেকে তার দিকে ফিরেও তাকালো না।

বৃষ্টি মাথায় নিয়েই হাটতে লাগলেন তিনি। রাতে যখন ঝিমুচ্ছিলেন তখন কোনভাবে ছাতাটা হারিয়ে ফেলেছেন। এর ভেতর সাদা পাঞ্জাবি হলদেটে হয়ে গিয়েছে ঘামে আর ময়লায়। হাতের চাপাতি আর ছুড়িগুলো বেশ ভার লাগছে তার। হঠাৎ এক মধ্যবয়স্ক লোক তাকে আটকালো।

– কসাই নাকি! খাসী বানাইতে পারবেন দুইটা?

– দুইটা মনে হয় পারবো না। একটা করে দেই?

– নাহ, দুইটা করার লোক লাগবে।

– ঠিক আছে, করে দিবো।

– পারবেন তো? কত নিবেন?

সাইদুর রহমান দুইটা খাসী বানাতে পারবেন কিনা তাও জানেন না আবার কত টাকা চাওয়া উচিত তাও জানেন না। তাই আমতা আমতা করতে থাকে।

– কী হইলো? কত নিবেন বলেন না কেন?

– কত দিবেন আপনি?

– এক হাজার টাকায় চলবে?

গ্রামে খাসী বানালে বাশার কসাই দুইশ-আড়াইশো টাকা পায়। সেই হিসাবে প্রস্তাবটা ভালোই মনে হলো সাইদুর রহমানের। রাজি হয়ে গেলেন তিনি। ঐ লোকের সাথে এগিয়ে গেলেন।

 

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সাইদুর রহমান মাত্র কাজ শেষ করলেন। দেয়ালে পিঠ এলিয়ে দিলেন তিনি। বহুদিন এত পরিশ্রম করা হয় নি। খাসী বানানো এত কষ্ট আগে বুঝতে পারেন নি তিনি। বুঝলে এই বয়সে এই কাজ করতেই আসতেন না। সকালের সেই লোককে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।

– কী বুড়া মিয়া! দুই খাসী বানাইতে সকাল থেকে সন্ধ্যা লাগায় দিলেন! এর ভেতর তো তিনটা গরু বানায় দিল আমার!

সাইদুর রহমান মৃদু হাসি দিলেন। এই লোক আরো তিনটা গরু কোরবানি করেছে শুনে তার মনে আশা জাগলো। হয়তো কিছু মাংস তিনিও পাবেন।

– এই নেন। ৫০০ টাকা রাখেন। মাংস অর্ধেক নষ্ট করছেন, চামড়া ফুটা করছেন একটা। তাই অর্ধেক টাকা কাটা। যান, বিদায় হন এইবার!

লজ্জায় আর কোন কথা বলতে পারলেন না সাইদুর রহমান। আস্তে আস্তে বের হয়ে আসলেন ঐ বাসা থেকে। তবে অন্তত ৫০০ টাকা হতে এসেছে ভেবে খুশিই হলেন তিনি। মাংস কেনা তো যাবে। মোবারকের বুদ্ধিমতো সস্তায় মাংস কোথায় পাওয়া যায় খোঁজ করতে করতে মগবাজার এলাকার ভেতরের একটা রেল ক্রসিং-এ গেলেন তিনি। কিন্তু গিয়ে দেখলেন সেখানে মাংস বিক্রি শেষ।

এদিকে রাত হয়ে আসছে। বাসে করে গ্রামে ফিরবেন ঠিক করলেন সাইদুর রহমান। মাংসের আর কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা ভাবতে ভাবতে বাসে উঠলেন তিনি।

 

শেষ পর্যন্ত কোন মাংস ছাড়াই বাড়ি ফিরলেন সাইদুর রহমান। কিছুক্ষণ উঠানে বসে থাকলেন মন খারাপ করে। এত কিছু করেও মাংসটাই জোগাড় করা গেলো না। এর চেয়ে লজ্জা ফেলে গ্রামের মানুষের কাছে চাইলেই কাজ হয়ে যেতো!

অনেকক্ষণ পর ঘরে ঢুকলেন সাইদুর রহমান। সন্ধ্যায় ঘরে আলো জ্বালায় নি ঝুমকা। বিরক্ত হয়ে নিজেই আলো জ্বালালেন সাইদুর রহমান। পাঞ্জাবি ছেড়ে ঝুমকার দিকে তাকিয়ে বুঝলেন আলো জ্বালানোর সুযোগ পায় নি মেয়েটা। পাশে বসে তাকিয়ে থাকলেন নিথর দেহটার দিকে। হঠাৎ ভাবলেন এটা এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। নাহলে আজ আবার ঝুমকার সেই আগুন জ্বলা চাহনি দেখতে হতো!

– মাস্টার আছেন নাকি! ও মাস্টার!

– কে?

– আমি। বাশার কসাই।

– ও হ্যা, তোমার টাকা আর জিনিসগুলো নিয়ে যাও। আমি মাত্রই আসলাম।

ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন সাইদুর রহমান। ৫০০ টাকার নোটটা বাশারকে দিয়ে দেয়। বাশার অন্য হাতটা বাড়িয়ে দেয় তার দিকে।

– এটা কী?

– নতুন বিয়া করছি না! বৌ নাকি আপনের ছাত্রী ছিল কোন্‌ কালে! মাংস পাঠাইছে রান্না কইরা।

– ও আচ্ছা। আমি একদিন যাবো ওর সাথে দেখা করতে।

 

ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সাইদুর রহমান আকাশের দিকে তাকিয়ে উঠানে বসে আছেন। তার চশমা ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। চশমা খুলে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকেন তিনি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাঁদার সুবিধা আছে। চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যায়।

 

(রচনা: সেপ্টেম্বর ২০১৬, জাহাঙ্গীরনগর; পরিমার্জন: অক্টোবর, ২০২২)

 

আরো পড়ুন: শিবলী নোমানের মাইক্রোফিকশন (১-৫)

২ thoughts on “মাস্টার”

  1. কোন্‌ কালের শিক্ষার্থীদের মাংসের মতো গুরুদক্ষিণা (?)র জন্যই হয়তো সাইদুর রহমানের মতো শিক্ষকেরা বছরের পর বছর ধরে প্রায় বিনালাভে পড়াতে থাকেন। আমি জানি না, হয়তো এইটুকুই অনেকসময় তাদের এক্সিটেন্সকে সত্যিকারের অর্থ দেয়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।