শিবলী নোমান
বর্তমান সময়ের বিদ্যায়তনে একটি আনুষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে উত্তর-উপনবেশী অধ্যয়ন বা পোস্ট-কলোনিয়াল স্টাডিজের সামনে আসার বেশ আগেই ১৯৬১ সালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ফ্রাঞ্জ ফানোঁ। তারপরও তাঁকে উত্তর-উপনিবেশী অধ্যয়নের জনক হিসেবে অভিহিত করার প্রয়াস নজরে পড়ে। উত্তর-উপনিবেশী অধ্যয়নের অন্যতম অনুষঙ্গ যে বিউপনিবেশায়ন বা বিউপনিবেশায়ন বিষয়ক ভাবনা, সেক্ষেত্রেও ফানোঁর লেখা একটি বইকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। ফানোঁর মৃত্যুর বছরেই ফরাসি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত এই বইটির শিরোনাম দ্য রেচেড অব দ্য আর্থ, ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল আরো বছর দুয়েক পর। মূলত উপনিবেশের বেড়াজালে জর্জরিত উপনিবেশিত মানুষদের বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ ভাবনা ও দর্শনই ফানোঁ এই বইতে তুলে ধরেছেন। এই বইটি যে বিউপনিবেশায়ন সংক্রান্ত আলোচনায় বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার, তা বুঝতে পারা যায় গণমাধ্যমের সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের প্রবক্তা ও বিশিষ্ট তাত্ত্বিক স্টুয়ার্ট হলের এই বইটিকে Bible of Decolonization বা বিউপনিবেশায়নের বাইবেল হিসেবে অভিহিত করার ঘটনা থেকে।
পৃথিবীব্যাপী জাল বিস্তার করা পশ্চিমা উপনিবেশ ও উপনিবেশবাদের ইতিহাসের খুব বেশি পুরনো নয়। বরং প্রাক্তন উপনিবেশগুলো এখনো উপনিবেশের দগদগে ঘা বয়ে বেড়াচ্ছে এমন দাবিও করা যায়। যদিও একটি উপনিবেশিত সমাজে বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়াটি ঠিক কোন সময় থেকে শুরু হয় তা নিয়ে তাত্ত্বিক বিতর্ক রয়েছে, সেই বিতর্কের দিকে না গিয়ে অন্তত এটুকু বলা যেতেই পারে যে, প্রতিটি উপনিবেশিত সমাজই বিউপনিবেশায়নের ভেতর দিয়ে যায়। আর এক্ষেত্রেই প্রশ্ন এসে যায় যে, বিউপনিবেশায়নের সঠিক প্রক্রিয়া আসলে কোনটি? কিংবা বিউপনিবেশায়নের সর্বজনীন কোন প্রক্রিয়া আদৌ আছে কিনা।
দ্য রেচেড অব দ্য আর্থ বইতে ফানোঁ এ বিষয়ে খুবই স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি বলতে চান, বিউপনিবেশায়নকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এটি নিশ্চিতভবেই একটি সহিংস বা Violent কার্যক্রম বা Program। তাই তিনি মনে করেন, উপনিবেশের নাগপাশ ভেদ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন যদি আসলেই নিশ্চিত করতে হয়, সেক্ষেত্রে উপনিবেশের জনগণের সহিংস হওয়া ছাড়া কোন উপায়ন্তর নেই। ফানোঁ বিউপনিবেশায়নকে এমন একটি প্রক্রিয়া বলছেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে নিচে থাকা, সবচেয়ে নিপীড়িত অংশটিকে এক ধাক্কায় সমাজ কাঠামোর সবচেয়ে উপরে নিয়ে আসা। আর যেহেতু জগতের নিয়মই এই যে, কেউ কারো জন্য সামান্যতম জায়গাটুকু ছেড়ে দেয় না, সেখানে যাদের শোষণের মাধ্যমে একটি সুবিধাভোগী শোষক শ্রেণি দাঁড়িয়ে গেছে, যেই শ্রেণিটি নিপীড়নের মাধ্যমেই নিজেদের সুখ-সমৃদ্ধি-বিলাসিতা নিশ্চিত করে আসছে যুগের পর যুগ, তারা কোন ধরনের ভদ্রলোকচিত চুক্তি তথা Gentlemen Agreement এর মাধ্যমে নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানটি ছেড়ে দিবে, তা বিশ্বাস করার কোন কারণ ফানোঁ অন্তত দেখেন না তাঁর দ্য রেচেড অব দ্য আর্থ গ্রন্থে।
ফানোঁর বিউপনিবেশায়ন চিন্তার কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে আফ্রিকায় উপনিবেশের ইতিহাস, ফানোঁর ক্ষেত্রে মূল ঔপনিবেশিক শক্তি হলো ফরাসিরা। কিন্তু আমাদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসও যে আফ্রিকায় হওয়া শোষণের চেয়ে খুব বেশি আলাদা নয়, বরং মূলগত দিক থেকে সকল ঔপনবেশিক শক্তিই যে এক, তা আরেকবার বুঝে নিতে দুইটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমরা কথায় কথায় বলি সুজলা-সুফলা ও ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ উপনিবেশ ২০০ বছর ধরে লুট করেছে। বিষয়টি অনেকটাই রেটরিকে পরিণত হয়েছে, যার প্রকৃত অর্থ আমরা আসলে অনেক সময়ই বুঝতে পারি না। বছর দুয়েক আগে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, রীতিবদ্ধ চুরির শুধুমাত্র একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেই ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারত থেকে অন্তত ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার চুরি করেছে। শোষণের বাকি সব হাতিয়ার সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপড়া না থাকলেও ২০০ বছরে সব মিলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শোষণের একটা ধারণা হয়তো এখান থেকে পাওয়া যায়। আর ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো উপনিবেশের মানুষদের যে আদৌ মানুষ মনে করতো না, তা বুঝতে স্মরণ করা যেতে পারে ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষকে। যে দুর্ভিক্ষে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল অনাহারে-অর্ধাহারে। দুর্ভিক্ষটি ছিল মানবসৃষ্ট এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটিশদের রাজনৈতিক পলিসি বা নীতিমালার অংশ। তাই বলা যায়, পৃথিবীর সব অংশের মানুষের জন্যই উপনিবেশের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রযোজ্য।
তো, সহিংসতার মাধ্যমে যে বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ার কথা ফানোঁ বললেন, সেখানে তিনি উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের একটি পস্থা হিসেবে অহিংস আন্দোলনকে বেশ উপহাসই করেছেন। উপনিবেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত অহিংস আন্দোলনগুলো মূলত উপনিবেশকেই পরোক্ষভাবে শক্তিশালী করে এবং ছোট ছোট দাবি আদায়ের ভেতর স্থানীয় জনগণকে ব্যস্ত রাখে, ফানোঁর এমন মনোভাবও তাঁর লেখা থেকে উপলব্ধি করা যায়। ফানোঁর মতে, অহিংস আন্দোলন দিয়ে কাজ হবে না কারণ উপনিবেশ জারি রাখার জন্য হিংসা ঔপনবেশিক শক্তিরই একটি হাতিয়ার। উপনিবেশের বিরুদ্ধে এমন অহিংস আন্দোলন পরিচালনা না করে ফানোঁ তাই উপনিবেশের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামের পক্ষ নিয়েছেন। আর যেহেতু তিনি সহিংসতার মাধ্যমে সমাজের আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার পক্ষে, তাই এই সংগ্রামের পদ্ধতি হিসেবে তিনি উপনিবেশিত অঞ্চলগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গেরিলা পদ্ধতির সংগ্রাম পরিচালনাকে গুরুত্ব দেন। এছাড়া, বারংবার ফানোঁ এই কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, উপনিবেশবাদে সহিংসতা একটি অনিবার্য বাস্তবতা।
তবে উপনিবেশ পরবর্তী এই সময়ে বিউপনিবেশায়নের এই সশস্ত্র পন্থার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হলো জাতীয় সংস্কৃতি ও উপনিবেশ থেকে মুক্ত দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রবণতা নিয়ে ফানোঁর বোঝাপড়া। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আসলেই থাকুক বা না থাকুক, আমরা এসব ক্ষেত্রে যে আরেকটি রেটরিক খুব বেশি ব্যবহার করি তা হলো, আমাদের হাজার বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি ছিল, আমাদেরকে সেখানে ফিরে যেতে হবে। এই ধরনের অবস্থান সম্পর্কে ফানোঁ বেশ সন্দিহান। ফানোঁ বলতে চান যে, শহুরে সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী শ্রেণি ও জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী মূলত নিজেদের কৌশলগত সুচিধা নিশ্চিত করার জন্যই এটি বলে থাকেন। তাছাড়া, এভাবে পূর্বের সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত করে সেদিকে ফিরে যাওয়া আসলে যে কোন সময়ের প্রজন্মের জন্যই বেশ কষ্টসাধ্য এবং অনেকটাই বোধগম্যতার বাইরের বিষয় হিসেবে থেকে যায়। এক্ষেত্রে ফানোঁ জাতীয় সংস্কৃতিকে বরং একটি সামষ্টিক চিন্তা প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কোন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত জনতার সংগ্রামগুলো যথাযথ ন্যায্যতা পায় ও সে অনুযায়ী নিজেকে বিবৃত করার সুযোগ পায়।
অন্যদিকে, ফানোঁ তাঁর এই গ্রন্থে উপনিবেশ থেকে মুক্ত রাষ্ট্রগুলোর একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবে স্বাধীনতা লাভের কিছুদিন পরই একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে সরে যাওয়ার প্রবণতায়ও আলোকপাত করেছেন। বিষয়টিকে ফানোঁ জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির একটি সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এক্ষেত্রে ফানোঁর প্রস্তাবনা হলো, যদি জনগণের সকল অংশের ভেতর সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করা যায়, তাহলে উপনিবেশ থেকে সদ্য মুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে একদলীয় শাসনের দিকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে না। তিনি মূলত বলতে চান, উপনিবেশ থেকে মুক্তির পরও মূলত জাতীয়তাবাদী চেতনার এক ধরনের নব্য-ঔপনিবেশিক গোষ্ঠী ক্ষমতায় চলে আসে, যারা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা ও চর্চাগুলো আগের মতোই চালিয়ে যায়। ফলে তাদের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনও হয় না, আর জনগণও আগের মতো বঞ্চিত থেকে যায়।
এক্ষেত্রে ফানোঁ মনে করেন, সংস্কৃতির সবচেয়ে উচ্চমানের ধরন হলো জাতীয় সচেতনতা। যে কোন জাতি তার সংগ্রামের সময় এই সংস্কৃতি সবচেয়ে বেশি ধারণ করতে পারে, সংগ্রাম শেষ হয়ে গেলে এই সংস্কৃতির খুব বেশি অবশেষও আর থাকে না। মূলত মুক্তির জন্য চলমান সংগ্রামের স্তরগুলোতেই একটি জাতির এই জাতীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে এমন সংস্কৃতি গড়ে উঠে। আর সেই জাতির সংগ্রাম যদি সফল হয়, তাহলে এরপর থাকে না আর কোন শাসক বা শোষিত শ্রেণি, বরং সৃষ্টি হয় এক ধরনের সাম্যাবস্থা।
বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়া ও বিউপনিবেশায়নের সাথে যুক্ত বিষয়াদির সাথে নিজের বোঝাপড়া বিবৃত করার পাশাপাশি, এই বইয়ের শেষ অংশে ঔপনিবেশিক যুদ্ধ কিংবা বৃহৎ অর্থে যে কোন সংঘাতের ফল হিসেবে এসব সংঘাতের সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত মানুষের ভেতর যে মানসিক বিকৃতি দেখা দেয়ার বিষয়টিতে ফানোঁ আলোকপাত করেছেন। পেশগত কারণে ফানোঁ এসময় ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশিত, উভয় পক্ষের যোদ্ধাদের মানসিক চিকিৎসা দিয়েছিলেন। আর এসবের ফলাফল থেকেই তিনি দেখিয়েছেন যে একেকটি সংঘাত কিভাবে মানুষের মনস্তত্ত্বকে দারুণভাবে প্রভাবিত, এমনকি বিকৃত করে ফেলে। যে বিকৃতি নিয়েই হয়তো অনেককে বাকি জীবন কাটাতে হয়। যে কোন যুদ্ধ বা সংঘাতের এই মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির দিকটি তো আমাদের জাগতিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকার বাইরেই রয়ে যায়, তবে বিষয়টি ফানোঁর মনোযোগ এড়িয়ে যেতে পারে নি।
তবে, ফানোঁর লেখালেখির সাথে পরিচিত পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন যে, ফানোঁর দ্য রেচেড অব দ্য আর্থ কিংবা অন্যান্য লেখাগুলোর ধারাবাহিকতা থেকে একটি উপলব্ধির বিষয় আছে। ফানোঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াইট মাস্কস ফরাসি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫২ সালে, ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশ পায় ১৯৬৭ সালে। এই গ্রন্থে ফানোঁর যে চিন্তাজগত, আর দ্য রেচেড অব দ্য আর্থ-এ ফানোঁর চিন্তাজগতের ভেতর দৃশ্যমান পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়। ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াইট মাস্কস বইতেও ফানোঁ বিউপনিবেশায়ন নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে ফানোঁ অনেক বেশি ভরসা রেখেছেন মানবিকতার প্রতি। তাঁর ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াইট মাস্কস পড়ে পাঠক মনে করতে পারেন যে, ফানোঁ এখানে কারো পক্ষই নিলেন না। কিন্তু দ্য রেচেড অব দ্য আর্থ-এ যেন এক আমূল পরিবর্তিত ফানোঁকে পাঠক আবিষ্কার করেন। এখানে ফানোঁ মানবিকতার পক্ষে না বলে সহিংসতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলছেন; জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের সঙ্কট নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলছেন; জনগণের সচেতনতার গুরুত্বে জোর দিচ্ছেন। মূলত পৃথিবীর হতভাগ্য, শোষিত মানুষের মুক্তির দিক-নির্দেশনা বা ইশতেহার রচনা করছেন। যেন এক আগাপাশতলা পরিবর্তিত ফানোঁ! ১৯৫২ থেকে ১৯৬১ সালের ভেতর আসলে কী হয়েছিল? ইতিহাস বলে, ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে উপনিবেশিত আলজেরিয়ার যুদ্ধ চলছিল। আর এই যুদ্ধে ফানোঁ আলজেরিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এই যুদ্ধ তাঁর চিন্তাজগতকে আলোড়িত করেছিল বলেই মনে হয়।
তবে আলজেরিয়ার যুদ্ধের কারণে হোক বা অন্য কোন কারণে, ফানোঁর অবস্থানের পরিবর্তন আমাদেরকে যে গুরুত্বপূর্ণ দিকে মনোযোগ দিতে বলে তা হলো, ফানোঁ কখনো বাস্তবতা সম্পর্কে নিজের অবস্থান বা ধারণাকে ধ্রুব মনে করেন নি। তিনি নিজের প্রস্তাবিত পন্থাগুলোকে নিশ্চিত ধরে নিয়ে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া থামিয়ে দেন নি, বরং তিনি সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন বোঝপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন। যে কেউই বলতে পারেন যে, ফানোঁর বোঝাপড়া ছিল ভুল, তা হলেও হতেই পারে। কিন্তু মানুষ ও পাঠক হিসেবে এই বোঝাপড়াটা জরুরি যে, নিজের চিন্তার স্রোত ও বোঝাপড়াগুলোকে থামিয়ে রেখে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা যায় না, একে বেঁচে থাকা বলে না। সময়ের সাথে সাথে ফানোঁর চিন্তা ও অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে, কারণ ফানোঁ সম্ভবত বেঁচে থেকেছিলেন প্রকৃত মানুষের মতোই।
(রচনাকাল: মে, ২০২১)