শিবলী নোমান
২০২০ সালের নভেম্বরে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের একটি সংবাদ অনেকের নজরে এসে থাকতে পারে। সংবাদটি ছিল অরুন্ধতী রায়ের একটি রচনা নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে। তামিল নাড়ুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল থেকে অরুন্ধতী রায়ের ওয়াকিং উইথ দ্য কমরেডস শীর্ষক রচনাটি পাঠ্য হিসেবে পঠিত হয়ে আসছিল। তিন বছর পঠিত হওয়ার পর গত নভেম্বরে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি নামক ছাত্র সংগঠনের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রচনাটিকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, এবিভিপি ভারতের লোকসভায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির ছাত্র সংগঠন।
অরুন্ধতী রায়ের পাঠকগণ নিশ্চিতভাবেই তাঁর লেখনির বিষয়ের সাথে পরিচিত। তবু বলে নেয়া যেতে পারে যে, ওয়াকিং উইথ দ্য কমরেডস শীর্ষক রচনায় অরুন্ধতী ভারতের মাওবাদী বিদ্রোহীদের সাথে তাঁর ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা, পালিয়ে বেড়ানো জীবনে মাওবাদী গেরিলাদের সুখ-দুঃখ-বেদনার কথা বিবৃত করেছেন। আর যেখানে ভারতের ক্ষমতার স্বাদ নেয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলই মাওবাদী বিদ্রোহীদের রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করতে ব্যস্ত ও সদাপ্রস্তুত, সেখানে ভারতেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের জীবনের প্রচারিত তথা সরকারি বয়ানের বিপরীতে একটি ভিন্ন বয়ানের পাঠ্যসূচিতে অবস্থান করাকে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মেনে নেয়ার তেমন কোন কারণ থাকার কথা নয়, সেই বয়ান সত্য হোক বা অসত্য। উল্টো এটিই আশ্চর্যের বিষয় যে, মাওবাদী বিদ্রোহীদের নিয়ে এমন একটি রচনা তিন বছর ধরে ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক একটি শিক্ষাঙ্গণে পঠিত হয়েছে, আর ঠিক এই কারণেই পাঠ্যসূচি থেকে রচনাটি বাদ দেয়ার সংবাদে অরুন্ধতী প্রথমেই নিজের খুশি প্রকাশ করেছেন,কারণ রচনাটি পঠিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অজ্ঞাত।
এই ঘটনার মাস দুয়েক আগে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় অরুন্ধতী রায়ের নয়টি রচনার সংকলন আজাদি। এর উপশিরোনামে রয়েছে তিনটি শব্দ, ফ্রিডম বা মুক্তি, ফ্যাসিজম ও ফিকশন বা কল্পকাহিনী। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০১৭ সালে অরুন্ধতী রায়ের দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশের ভেতর রয়েছে ২০ বছরের ব্যবধান। ১৯৯৭ সালে দ্য গড অব স্মল থিংস প্রকাশের পরের ২০ বছর অরুন্ধতী মূলত নন-ফিকশনই লিখেছেন। রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের নানা অসঙ্গতি, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের দ্বিচারিতা, একচেটিয়া পুঁজিবাদের করাল গ্রাস, প্রকৃত ও জীবন নিয়ে অরুন্ধতী একের পর এক রচনা লিখে গিয়েছেন। আর এ কারণেই হয়তো একজন ঔপন্যাসিকের চেয়ে একজন রাইটার-অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেই তিনি অনেক বেশি পরিচিত হয়েছেন। তাহলে কেন ২০ বছর পর এসে অরুন্ধতী ফিরে গেলেন আরেকটি উপন্যাস তথা ফিকশন বা কল্পকাহিনী লেখার দিকে। ব্যক্তি অরুন্ধতী কিংবা রাইটার-অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী কি অবিচার-নিপীড়ণ-অনিয়মের বিরুদ্ধে বলতে বলতে, লিখতে লিখতে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত?
মূলত এই প্রশ্নের উত্তরই উঠে এসেছে অরুন্ধতী রায়ের নয়টি রচনার সংকলন, নতুন গ্রন্থ আজাদি-তে। বর্তমান সময়ে অরুন্ধতী ভারতের বিজেপি সরকারের একজন কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। আর তাই এই বইতে দেখা যায়, একেবারেই সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়েও তিনি বর্তমান ভারতে চলমান ধর্মীয় উগ্রবাদিতার সাথে তাঁর ফিকশন বা কল্পকাহিনীকে যুক্ত করে ফেলেন। তিনি তাঁর উপন্যাস নিয়ে আলোচনায় ভারতের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ও এর প্রভাবগুলোকে খুব প্রাসঙ্গিক রূপে সামনে নিয়ে আসতে পারেন।
অরুন্ধতী মনে করেন, একজন লেখক হিসেবে উপন্যাস লেখার মাধ্যমেই তিনি সবচেয়ে বেশি মুক্ত থাকতে পারেন, উপন্যাস লেখাই একজন লেখক অরুন্ধতী রায়ের কাছে ‘আজাদি’ বা স্বাধীনতা। আর অরুন্ধতীর এই অবস্থানের ব্যাখ্যাও খুব বেশি জটিল নয়। অরুন্ধতী বলতে চান, বর্তমান ভারতের মতো একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে, যেখানে নন-ফিকশনের মাধ্যমে সত্য কথা বলা, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা দিনকে দিন কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে উপন্যাসই হলো সেই মাধ্যম যেখানে লেখক তার সকল ভাবনা-কল্পনা-চাওয়া-পাওয়াকে ব্যক্ত করতে পারেন। এজন্যই তিনি ২০ বছর পর আবারও ফিরে গিয়েছেন ফিকশনের কাছে। কারণ বর্তমান ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাকে যেভাবে ভারত সরকার ও সরকার পালিত বা সমর্থিত অগণিত গণমাধ্যম এক ধরনের ‘না ঘটা’ বিষয়ে পরিণত করেছে, কিংবা ঐ ভয়াবহ দাঙ্গাকে জনগণের সামষ্টিক স্মৃতি থেকে মুছে দিতে চাচ্ছে, সেখানে নন-ফিকশন দিয়ে সুবিধা করা যাবে, এমনটা মনে করেন না অরুন্ধতী। আর তাই তিনি তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস-এ এমন সব চরিত্র তৈরি করেছেন, যাদের কারো কারো জীবনে গুজরাট দাঙ্গা স্থায়ী ও স্পষ্ট প্রভাব রেখে গিয়েছে। রাষ্ট্র যখন দাঙ্গার ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়, তখন ঔপন্যাসিক তাঁর কল্পনায় একে জীবিত রাখেন!
অরুন্ধতী রায়ের অ্যাক্টিভিজমের একটি বড় জায়গা হলো কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের কর্তৃত্ববাদ, অবদমন ও সামরিকায়ন। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে আফজাল গুরুর বিতর্কিত ফাঁসি, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল থেকে শুরু করে চলমান অবরুদ্ধতা, সব বিষয়েই নিয়মিত উচ্চকিত থেকেছেন অরুন্ধতী। কিন্তু অরুন্ধতী বলতে চান, কাশ্মীরকে ভারতীয়দের চিন্তার ভেতর এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে, কাশ্মীরের মানুষের স্বাধিকারের কথা বলাও খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আর এজন্যই হয়তো কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারতের রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ মিছিল হতে দেখা গিয়েছে। আর যেহেতু প্রকাশ্য দিবালোকে, বাস্তব জগতে কাশ্মীর বিষয়ে কোন ধরনের ভিন্ন বয়ানের সুযোগ নেই, তাই কাশ্মীরও অরুন্ধতীর উপন্যাসের ক্ষেত্র হয়ে উঠে, উপন্যাসের চরিত্রের মুখে ফুটে উঠে কাশ্মীরের আর্তনাদ-আহাজারি-অভিজ্ঞিতা-প্রতিরোধ-প্রতিবাদ। আজাদি বইয়ের বেশ কিছু রচনায় এভাবেই অরুন্ধতী রায়ের উপন্যাস রচনার দিকে ফিরে যাওয়া নিয়ে আলোচনা পাওয়া যাবে। তাছাড়া অরুন্ধতী ভারতের কথা কিংবা তাঁর উপন্যাস কেন ইংরেজি ভাষায় লিখে থাকেন, এ বিষয়েও তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তিনি। আর এই অবস্থান পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও ভাষা প্রশ্নে ভারত রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণকে উপজীব্য করেছেন তিনি। এ কারণেই সম্ভবত অরুন্ধতী অনেকের চেয়ে আলাদা! তাঁর কাছে তাঁর অবস্থান অনেকটাই যেন স্পষ্ট, দিবালোকের মতোই।
অন্যদিকে, এই বইয়ের অনেকগুলো রচনা ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার ও নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় ভরপুর। কিভাবে বিজেপি তার পিতৃ-সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-র এজেন্ডা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তার অন্তর্ভেদী বর্ণনা এসব রচনায় উঠে এসেছে। বিজেপি সরকার প্রণীত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি, ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর ও সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএ-র মাধ্যমে কিভাবে ভারতকে একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা বারবার ব্যক্ত করেছেন অরুন্ধতী। যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তিনি বারংবার বলার চেষ্টা করছেন তা হলো, বিজেপি ভারতকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় না, যদিও বর্তমানে ভারতবিরোধীদের অধিকাংশের দাবি এমনই। অরুন্ধতী বরং বলতে চান বিজেপি বা আরএসএস-এর মূল্য লক্ষ্য এক ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যার ভিত্তি হবে হিন্দু বর্ণপ্রথা। আর এই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ারই সূচনা হলো এনআরসি, এনপিআর বা সিএএ-র মতো প্রকল্প বা আইন। কিভাবে বিজেপি এই ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় বা তাদের পরিকল্পন সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে অরুন্ধতী রায়ের আজাদি হতে পারে এক দারুণ পাঠ্য। বর্তমান বিজেপি শাসনকে কেন অরুন্ধতী ফ্যাসিস্ট বলছেন, সে ব্যাপারটিও স্পষ্ট হয়ে যাবে এসব রচনা থেকে।
এসব রচনায় অরুন্ধতী এই মতও ব্যক্ত করেছেন যে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারতীয় শাসকবর্গ যেখানে শেষ পর্যন্ত অখণ্ড ভারতকে বাস্তবে রূপদানের আত্মশ্লাঘায় ব্যস্ত, তা আসলে অস্পষ্টতা ও আশঙ্কায় পূর্ণ। তিনি মনে করেন বর্তমান ভারত সরকারের কার্যক্রম মূলত ভারতকে, যে সেক্যুলার-সমাজতান্ত্রিক ভারতীয় চেতনা ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিল, তাকেই বিনষ্ট করে ভারতের শেষের শুরুও করতে পারে। তবে ভারতের সংবিধানে উল্লিখিত সেক্যুলার-সমাজতান্ত্রিক ভারত আদতে কখনো ছিল কিনা, তা নিয়েও ব্যাঙ্গ করতে ছাড়েন নি তিনি।
এছাড়া তিনি বর্তমান সময়ের ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যম, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, ভার্চুয়াল যোগাযোগ মাধ্যম, ওটিটি প্লাটফর্মগুলোর মতো বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ভারতজুড়ে আপাতত মুসলিমবিদ্বেষী, মূল বিচারে ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তা ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। একই সাথে তিনি উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে জেতার জন্য উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো কিভাবে ধর্ম, জাতীয় নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি নিয়মিত ছদ্ম-হুমকি উৎপাদন করে বেড়াচ্ছে।
আজাদি বইতে স্থান পাওয়া নয়টি রচনা লেখার সময়কাল ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। এই সংকলনের শেষ রচনায় কোভিড-১৯ মহামারী ব্যবস্থাপনায় ভারত সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করেছেন অরুন্ধতী। এই রচনাটিতে অরুন্ধতী দাবি করেছেন, নতুন এই মহামারী আমাদের সামনে দুইটি সুযোগ তৈরি করে দিবে। একটি সুযোগ হলো মহামারীর পর সব আগের মতো চালিয়ে যাওয়া, অর্থাৎ বৈষম্য-অবিচার-লুটপাটের সিলসিলা জারি রাখা; অথবা আরেকটি সুযোগ হতে পারে নতুন ভাবে বৃহত্তর কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আর এই অংশে এসেই আজাদি বইয়ের ব্যাক কাভারে উল্লিখিত কথাটি বলা হয়তো প্রাসঙ্গিক হয়, “সামনে কী আছে? বিশ্বকে নতুন করে ভাবা, আর কিছুই না!”
আজাদি মূলত বর্তমান সময়ে ভারতে চলমান ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী তথা ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এক কঠোর প্রতিবাদী বয়ান। ভারতের আভ্যন্তরীণ এই বিষয়টি নিয়ে কেন আমাদেরও ভাবা উচিত, অর্থাৎ আজাদি কেন বাংলাদেশের মানুষেরও পড়া উচিত, সেই ব্যাখ্যা কিছুটা দেয়া যায় গত শতকের মধ্যভাগে ভারতে কাজ করা ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ ডেভিড ম্যাককাচ্চনের একটি রচনা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে। ১৯৬০ এর দশকে কর্মস্থল ভারত থেকে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে এসেছিলেন তিনি। সে সময় পূর্ব-পাকিস্তান বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন ইমপ্রেশনস অব ইস্ট পাকিস্তান শীর্ষক রচনা। আর এখানেই তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নির্ভর করছে দুইটি বিষয়ের উপর। প্রথমত, পাকিস্তান সরকার; দ্বিতীয়ত, ভারতের সাম্প্রদায়িকতা। আর তিনি এও বলেছিলেন যে এই দুইটি বিষয়কে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে কোন সমাধান পাওয়া যাবে না, এরা একে অপরকে শক্তিশালীই করতে পারে মাত্র। তাছারা ম্যাককাচ্চন বলেছিলেন যে অন্য দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা মানুষেরাই সাধারণত নতুন এক দেশে এসে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনে বেশি লিপ্ত হয়, যতটা না হয় ঐ দেশের স্থানীয় বাসিন্দারা। আর সচেতন পাঠকদের জন্য এই ইশারাই কি যথেষ্ট নয়?
সবশেষে এটি বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, আজাদি বইতে স্থান পাওয়া নয়টি রচনায় বারংবার একই তথ্যের, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রয়েছে। আবার অরুন্ধতী এসব কথা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। তাই এই বইটিতে খুব বেশি নতুনিত্ব হয়তো অনেকেই খুঁজে পাবেন না, কিংবা বলবেন অরুন্ধতী যা বলেছেন তা চর্বিত চর্বণ। পাঠকদের এমন প্রতিক্রিয়া কোনভাবেই একেবারে বাতিলযোগ্য নয়। কিন্তু এর সাথে এটুকুও মনে রাখা জরুরি যে, অরুন্ধতী পরিচিতি লাভ করেছেন রাইটার-অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে। আর যে বৈষম্য-অনাচারের বিরুদ্ধে ও যেসব নিগৃহীত মানুষের পক্ষে তাঁর চলমান সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম শেষ হয় নি বরং দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাই অরুন্ধতির লেখনি প্রতিদিন হয়তো আরো বেশি বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, এর সাথে থাকা চর্বিত চর্বণের অভিযোগ বা অনুযোগ সমেতই।
নিপীড়িত মানুষের পক্ষে অরুন্ধতীর সংগ্রামের সিলসিলা জারি থাক!
(রচনাকাল: মে, ২০২১)